বিশ্ব পরিবেশ দিবস, Best write-up on World Environment Day in Bengali


পৃথিবীতে উপস্থিত সবকিছুই পরিবেশের প্রতিটি উপাদানের দ্বারা প্রভাবিত হয়, সেটা একজন ব্যক্তি হোক বা প্রাণী অথবা উদ্ভিদ সবকিছুই পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত। তবে এই প্রভাবকগুলির মধ্যে আছে প্রাকৃতিক তথা অপ্রাকৃতিক বা কৃত্রিম পারিপার্শ্বিক উপাদান সমূহ। প্রতি বছরের ৫ জুন বিশ্বব্যাপী বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই বিশেষ দিন টি পালন করা হয়।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস
Pin it

পরিবেশ দিবসের স্বীকৃতির ইতিহাস, History of Environment Day Recognition

 প্রথমবার পরিবেশ দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত কবে এবং কিভাবে নেওয়া হয়, এর ইতিহাস সম্পর্কে আগে জেনে নেওয়া উচিত। সুইডেন সরকার ১৯৬৮ সালের ২০ মে তারিখে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় যার বিষয়বস্তু হিসেবে উল্লেখিত ছিল প্রকৃতি তথা পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সেই দেশের গভীর উদ্বেগের কথা।

পরিবেশ দিবসের স্বীকৃতির ইতিহাস
Pin it

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে উক্ত বছরই পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিকে সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্য সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হয়। পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ৫ থেকে ১৬ জুন পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় বের করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতি নিয়ে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে “জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন” অনুষ্ঠিত হয়।

এই সম্মেলন ইতিহাসের প্রথম পরিবেশ-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। পরে ১৯৭৪ সালে উক্ত সম্মেলনের প্রথম দিন অর্থাৎ ৫ জুনকে জাতিসংঘ দ্বারা ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই বছর থেকেই বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দিবস পালিত হয়ে আসছে।

মানবজীবনে পরিবেশের ভূমিকা, Role of environment in human life in Bengali

পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান, Different components of the environment

আমাদের চারিপাশে বহু উপাদান রয়েছে, পারিপার্শ্বিক সকল উপাদান নিয়েই আমাদের পরিবেশ গঠিত। পরিবেশের উপাদানগুলোর মধ্যে আছে গাছ-পালা, নদী-নালা, রাস্ত-ঘাট, খাল-বিল, ঘর-বাড়ি, জল, মাটি, সূর্য, নৌকা, বায়ু, পশু-পাখি, দালান-কোঠা, বিদ্যালয়, যানবাহন ইত্যাদি।এক কথায় আমাদের চারপাশে যা আছে তার সবকিছুই পরিবেশের অংশ।

তবে এই সবকিছু দুটি ভাগে বিভক্ত, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং কৃত্রিম পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ সেই পরিবেশকে বলা হয় যা প্রকৃতি নিজে সৃষ্টি করেছে; এর মধ্যে গাছ, পাহাড়-পর্বত, মাটি, বায়ু, ঝর্ণা, নদী ইত্যাদি অন্তর্গত। এসবকিছু মানুষ সৃষ্টি করতে অক্ষম। অন্যদিকে মানুষের তৈরি পরিবেশকে কৃত্রিম পরিবেশ বলে।

পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান
Pin it

মানব সৃষ্ট পরিবেশের মধ্যে রয়েছে নগরায়ণ, বন্দর, বড় অট্টালিকা, কারখানা ইত্যাদি। এইসব কিছু মানুষ নিজ প্রয়োজনের তাগিদে সৃষ্টি করে। পরিবেশের প্রত্যেক উপাদানের সুসমন্বিত রূপই হচ্ছে সুস্থ পরিবেশ স্বরূপ। তবে এই সুসমন্বিত রূপের ব্যাঘাতই ঘটায় দূষণ।  পরিবেশ দূষিত হলে পরিবেশের স্বাভাবিক মাত্রায় অবক্ষয় দেখা দেয়।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার, Best article on Environmental pollution and its remedies

পরিবেশ দূষণ, Environmental pollution

দূষিত পরিবেশ বর্তমান সময়ের একটি বিরাট সমস্যা। এটা অস্বীকার করার নয় যে বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে পরিবেশের ভারসাম্য অবনতির পথে চলে যাচ্ছে। সভ্যতার যত অগ্রগতি হচ্ছে প্রকৃতি ততই মানুষের প্রতি বিরূপ হচ্ছে। মানুষ নিজের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে পরিবেশের প্রতি তাদের দুর্ব্যবহার কতটা বেড়ে উঠেছে সেটা তারা লক্ষ্যই করছেন না, ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে দূষণের মাত্রা।

বিগত বেশ কিছু বছর ধরে আমরা দেখছি, বিভিন্ন মাধ্যমে শুনছি এবং পড়ছিও, যে বিশ্বে পরিবেশ দূষণের সমস্যা ক্রমে তীব্র আকার ধারণ করে চলেছে। মানুষ নিজের সুবিধার জন্য বিভিন্ন সংস্থান তৈরি করেছে, যার জন্য ক্রমাগত ধ্বংস করেছে পরিবেশকে, গাছপালা কাটা, অরণ্য ধ্বংস করা ইত্যাদি বিষয় আমাদের প্রবল ক্ষতি ডেকে আনছে। তাছাড়া জলের অপচয়, যানবাহনের ধোঁয়া, কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, প্লাস্টিকের ব্যবহার, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার ইত্যাদিও বিভিন্ন ভাবে পরিবেশকে দূষিত করে চলেছে। কিন্তু এসবের দিকে যেন কেউ নজর দিচ্ছে না।

পরিবেশ দূষণ
Pin it

বিভিন্ন দেশের সরকার কর্তৃক বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হলেও কোনো কিছুই তেমন সক্রিয় ভাবে কাজ করছে না। যার ফলে বেড়ে চলেছে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবও। কারখানা ও ইট ভাটা ইত্যাদির চুল্লি থেকে নির্গত ভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারর গ্যাস, আর বিপুল পরিমাণ হানিকারক রাসায়নিক পদার্থ নিষ্কাশনের ফলে দিনের পর দিন পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘটছে।

এর সাথেই পরিবর্তিত ঘটছে বায়ুমন্ডল এবং জলবায়ুরও, যার ফল স্বরূপ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমশ  বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ভারতের পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছুটা অঞ্চল সহ বাংলাদেশ, মালদ্বীপ এবং শ্রীলংকার মত পৃথিবীর নিম্নভূমির দেশসমূহ সম্পূর্ণভাবে তলিয়ে যেতে পারে । 

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার, Price hike and its remedies in Bengali

পরিবেশ রক্ষার উপায়, Ways to protect the environment

পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজন জনগণের সচেতন উদ্যোগ, কারণ বনাঞ্চলের অবক্ষয় ও ঘাটতি, জনবিস্ফোরণ, এবং শিল্প তথা পরিবহণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাব থাকার দরুন বিভিন্ন দেশের পরিবেশ অসুস্থ হয়ে পড়ছে এবং দূষণের মাত্রা জটিল অবস্থার দিকে পৌঁছে যাচ্ছে। তাই যার যতটুক সাধ্য আছে, ততটুকু করার চেষ্টার মাধ্যমেই পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখা দরকার। পরিবেশ রক্ষার্থে আমরা যা করতে পারি :-

পরিবেশ রক্ষার উপায়
Pin it

১) গাছপালা ধ্বংস না করা এবং অন্যদেরকে অরণ্য নিধনে নিরুৎসাহিত করা। পরিবেশকে সুন্দর করে তুলতে বেশি করে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়ার আর অন্য মানুষকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করা।

২) যানবাহনের ক্ষতিকর কালো ধোঁয়া কম করার চেষ্টা করা। অন্যদের মধ্যেও এ ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তোলা। ট্রাফিকে দাঁড়িয়ে থাকার সময় গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ রাখা এবং অযথা হর্ন না মারার চেষ্টা করা খুব জরুরী। 

৩) যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলা ও যেখানে সেখানে বর্জ্য পদার্থ নিস্কাশিত না করা। 

৪) যুদ্ধে লিপ্ত না হওয়া এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার না করা।

৫) প্লাস্টিক ব্যবহার বর্জন করে পরিবেশ বান্ধব পদার্থ দিয়ে তৈরি জিনিস বেশি ব্যবহার করা।

৬) কৃষি খেতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করা।

৭) পশুপাখি হত্যা না করা, যাতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং জীব বৈচিত্র্য সক্রিয় থাকে।

 বেশি করে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া
Pin it

৮) পৃথিবীতে সকল স্থানেই এখন অন্য যেকোনো জিনিসের তুলনায় মানুষ ইলেকট্রনিক্স কিংবা প্রযুক্তি পণ্যের সঙ্গে বেশি যুক্ত। পাখা, বাতি থেকে শুরু করে ল্যাপটপ, মোবাইল, কোনটা নেই ! এই সব যন্ত্র অপ্রয়োজনে বন্ধ করে রাখা উচিত। এতে আপনি বিপুল জ্বালানী সাশ্রয় করতে পারবেন।

প্রকৃতি নিয়ে উক্তি, বাণী, স্টেটাস, ফটো ~ Bengali Nature Quotes, Poetic Lines, Captions, Status, Pictures

ভারতে পরিবেশ দিবস উৎযাপনের কর্মসূচি, Environment Day Celebration Program in India

ভারতে ২০১১ সাল থেকে পরিবেশ দিবস উৎযাপন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। এই দিনে সকলে মিলে বৃক্ষরোপণ করেন, আশেপাশের সকল স্থান ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করা হয় এবং সকলকে গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহিত করা হয়।

তাছাড়াও কিছু স্থানে পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তুলতে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় এবং পরিবেশ দূষণ মুক্ত রাখার এবং প্লাস্টিক ব্যবহার বর্জন করে কাগজের বা পাটের ব্যাগ ইত্যাদি ব্যবহারের স্লোগান দেওয়া হয়। বিভিন্ন সংস্থা থেকেও বাজার হাট পরিষ্কার করা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন থিমের উপর ভিত্তি করে পরিবেশ দূষণ মুক্ত করার কাজে লেগে যায় জনগণ।

ভারতে পরিবেশ দিবস উৎযাপনের কর্মসূচি
Pin it

কিছু বিদ্যালয়ে এক সপ্তাহ ধরে এই বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। তবে এইসব কর্মসূচি ক’দিনের জন্য পালন না করে বরং যার দ্বারা যতটা সম্ভব সবসময় পরিবেশকে দূষণমুক্ত ও সুস্থ রাখার চেষ্টা করতে হবে।

শেষ কথা, Conclusion

প্রতিবছরই ৫ জুন বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশগুলিতে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সরকারি অনুষ্ঠানের ও বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কিন্তু তা কেবল একদিনের জন্যই হয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে একটি সপ্তাহের আয়োজন করা হয়।

 পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।
Pin it

বাকি সারা বছর মানুষ পরিবেশকে অবহেলিত করে চলেছে। এর ফলস্বরূপ পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে তাদের কোনো কার্যকলাপ ফলপ্রসূ হচ্ছে না। তাই পরিবেশ রক্ষা করতে সকলেই একসাথে এগিয়ে আসতে হবে এবং পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো আমরা প্রতি পদক্ষেপে নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনবো।


Recent Posts