বিশিষ্ট ধর্ম সংস্কারক কেশবচন্দ্র সেনের জীবনী, Biography of Keshab Chandra Sen in Bengali


বাংলা নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা এবং বাঙালি হিন্দুসমাজের এক বিশিষ্ট ধর্ম সংস্কারক কেশবচন্দ্র সেন ছিলেন একজন বাঙালি ব্রাহ্মণ, নেতা এবং  সুবক্তা। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ শাসিত ভারতে, দেশীয়  জাতীয় চেতনা ও ঐক্যের অন্যতম উন্মেষক ও মুখপাত্র হিসাবেও তিনি সর্বজন পরিচিত এবং সম্মানিত ।

বিশিষ্ট ধর্ম সংস্কারক কেশবচন্দ্র সেনের জীবনী

জন্ম, Birth

 ১৯ নভেম্বর ১৮৩৮ সালে কেশবচন্দ্র সেনের জন্ম   হয় কলকাতার কলুটোলা র এক সম্ভ্রান্ত বৈষ্ণব পরিবারে । পিতামহ দেওয়ান রামকমল সেন ছিলেন তৎকালীন ‘রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গলে’র প্রথম ভারতীয় সেক্রেটারি। কেশব চন্দ্র সেন ছিলেন (রামকমল সেনের দ্বিতীয় পুত্র), প্যারীমোহন সেনের পুত্র।কেশবচন্দ্রের মা সারদাসুন্দরী দেবী ছিলেন এক পরম রূপবতী ও মহীয়সী রমণী। তাঁদের আদি নিবাস ছিল নদীয়ার গড়িফা গ্রামে।১৮৪৮ সালে মাত্র চৌত্রিশ বছর বয়সেই কেশবচন্দ্রের পিতার মৃত্যু হয়। অতএব বালক অবস্থায় কেশবচন্দ্রের চরিত্রগঠনের ক্ষেত্রে তাঁর মায়ের প্রভাব ছিল সর্বাধিক। 

শৈশব ও ছাত্রজীবন, Early life and education

বুদ্ধিমত্তা ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ছিল   বালক কেশবচন্দ্রের মধ্যে ।তাঁর প্রাথমিক  শিক্ষার সূত্রপাত হয় বাড়িতে, এক ব্রাহ্মণ গুরুমশাইয়ের কাছে। কেশবচন্দ্রের যখন সাত বছর বয়স তখন তিনি ভর্তি হন তৎকালীন হিন্দু স্কুলে। অপরিসীম মেধা ও বুদ্ধিমত্তা তাঁকে করেছিল অন্য সব বালকের থেকে স্বতন্ত্র। তিনি ছিলেন মূলত শান্ত,ধীর ও সংযত স্বভাবের মানুষ তবে তাঁর  মধ্যে এক সুপ্ত অনমনীয় তেজস্বী রূপ ছিল যার বিস্তার লাভ করেছিল তাঁর পরবর্তী জীবনে ।হিন্দু কলেজে পড়াকালীন তিনি ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, ন্যায়, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেন এবং পরবর্তীকালে কিছুদিনের জন্য তিনি হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজে  ও অধ্যয়ন করেছিলেন।

সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবনী ~ Biography of Satyendra Nath Bose in Bengali

শৈশব ও ছাত্রজীবন

কর্মজীবন, Career

১৮৫৫ সালে তিনি শ্রমজীবীদের সন্তানদের জন্য  একটি সান্ধ্যকালীন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা ১৮৫৮ অবধি চালু ছিল। ১৮৫৫ সালে তিনি Goodwill Fraternity র (একত্ববাদী  ধর্মসভা)   সেক্রেটারি রূপে নিযুক্ত হন ।জেমস লং কেশবচন্দ্র সেনকে সেই বছরেই “ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন” প্রতিষ্ঠার কাজে সহায়তা করেছিলেন। সেই সময় থেকেই কেশব চন্দ্র সেন  ব্রাহ্মসমাজের ধ্যান -ধারণার প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেন।১৮৫৪ সালে তাঁকে কিছু সময়ের জন্য এশিয়াটিক সোসাইটির সেক্রেটারি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়ে থাকে। এবং পরবর্তীকালে অল্প  সময়ের জন্য তিনি ব্যাঙ্ক অফ বেঙ্গল এ একজন কেরানী হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন। তবে নিজেকে শুধুমাত্র   সাহিত্য ও দর্শনে নিবেদিত করার উদ্দেশ্য হেতু  তিনি কেরানির পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন  এবং  ১৮৫৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাহ্ম সমাজে যোগদান করেছিলেন।

কর্মজীবন

কেশব চন্দ্র সেন ও ব্রাহ্মসমাজ, Keshab Chandra Sen and Brahmo Samaj

তরুণ কেশব চন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজের যোগদান করলে ব্রাহ্ম আন্দোলন নব বলে বলীয়ান হয়ে ওঠে। তাঁর নিষ্ঠা, ধর্ম উন্মাদনা ,বাগ্মিতা ও ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে বহু শিক্ষিত যুবক, দলে দলে ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করে। তিনি অচিরেই তরুণ ব্রাহ্মদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হন। তাঁর সহকর্মীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্রতাপ চন্দ্র মজুমদার, বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী, উমেশ চন্দ্র দত্ত প্রমুখ। তাঁর সাফল্যে মুগ্ধ হয়ে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে “ব্রহ্মানন্দ” উপাধি দেন এবং ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক ও আচার্য পদে বরণ করেন।

তাঁর উদ্যোগে,’ ব্রাহ্ম বন্ধুসভা(১৮৬০খ্রিস্টাব্দ)  ‘, ‘সংগত সভা ‘(১৮৬০খ্রিস্টাব্দ)ও ‘ক্যালকাটা কলেজ'(১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ) প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘ইন্ডিয়ান মিরর'(১৮৬১খ্রিস্টাব্দ) পত্রিকার প্রকাশ তাঁর অন্যতম কীর্তি। নারী কল্যাণের জন্য তিনি বামাবোধিনী সভা(১৮৮৩) ও ব্রাহ্মিকা সমাজ(১৮৮৫) প্রতিষ্ঠা করেন। এই উদ্দেশ্যে ‘পরিচারিকা’ ও ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ প্রকাশিত হয় ।এ ছাড়া তিনি ‘ধর্মতত্ত্ব’ ও ‘সুলভ সমাচার’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। কেবল বাংলার অভ্যন্তরেই নয় ,বোম্বাই, মাদ্রাজ, উত্তর পশ্চিম প্রদেশ( বর্তমান উত্তরপ্রদেশে একাংশ) প্রভৃতি অঞ্চলেও তিনি ব্রাহ্মধর্ম ও সমাজসংস্কারের আদর্শ বিস্তৃত করেন। বলা হয়ে থাকে যে কেশবচন্দ্র পরিচালিত এই ধর্ম ও সমাজ সংস্কার আন্দোলনই হলো ‘প্রথম সর্বভারতীয় আন্দোলন’।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জীবনী ~ Biography of Shirshendu Mukhopadhyay

কেশব চন্দ্র সেন ও ব্রাহ্মসমাজ

১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে সারা দেশে  ব্রাহ্মসমাজের সদস্য ছিল মাত্র ৫০০ জন।১৮৬৪ খ্রীস্টাব্দে তা  দাঁড়ায় ২০০০ এ। ১৮৬৫ খ্রীস্টাব্দে বাংলায় পঞ্চাশ টি, উত্তর পশ্চিম প্রদেশে দুটি ,পাঞ্জাবে একটি ও মাদ্রাজে একটি অর্থাৎ  সারা ভারতে ব্রাহ্মসমাজের মোট চুয়ান্ন টি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। অচিরেই কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বাধীন তরুণ ব্রাহ্মণদের সঙ্গে দেবেন্দ্রনাথের বিরোধ বাধে। অসবর্ণ বিবাহ, বিধবা বিবাহ ,ব্রাহ্ম আচার্যদের উপবীত গ্রহণ ও সংস্কৃতের পরিবর্তে বাংলায় মন্ত্রোচ্চারণ প্রভৃতি প্রশ্নে দেবেন্দ্রনাথের রক্ষণশীলতার প্রতিবাদ করায় ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে কেশব চন্দ্র ও তাঁর অনুগামীরা ব্রাহ্ম সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হন। তাঁরা ‘ভারতবর্ষ ব্রাহ্ম সমাজ'(১৮৬৬ খ্রীস্টাব্দ) প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেবেন্দ্রনাথের ব্রাহ্মসমাজ ,’আদি ব্রাহ্মসমাজ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

কেশবচন্দ্র সেন ও তাঁর অনুগামীদের কাছে ব্রাহ্ম ধর্ম হল সমন্বয় ও সর্বজনীন। কেবলমাত্র পৌত্তলিকতা ই  নয় তাঁরা সমভাবেই জাতিভেদ ও অপরাপর সামাজিক কুপ্রথার বিরোধী  ছিলেন এবং তাঁদের কাছে ব্রাহ্মধর্ম নিছক একটি ধর্মীয় আন্দোলন নয়- সমাজ সংস্কারও তার অঙ্গীভূত।     

কেশব চন্দ্র সেন ও ভারতীয় ব্রাহ্ম সমাজ, Keshab Chandra Sen and Bharatiya Brahmo Samaj

কেশবচন্দ্র  সেনের নেতৃত্বে ভারতীয় ব্রাহ্মসমাজ বিধবা বিবাহ, স্ত্রীশিক্ষা, অসবর্ণ বিবাহ, সুলভ সাহিত্য প্রচার ,নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, শিক্ষাবিস্তার, পতিতা মেয়েদের উদ্ধার ও নানা জনহিতকর কার্যাবলী র পক্ষে এবং বাল্যবিবাহ, মদ্যপান ও পর্দা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্রাহ্মসমাজের আদর্শ প্রচারের জন্য এক পয়সা দামের পত্রিকা, ‘সুলভ সমাচার’ ও শ্রমিকদের সংগঠিত করার জন্য ‘ভারত শ্রমজীবী’ শ্রমিকদের মধ্যে মদ্যপান নিবারণের জন্য এক পয়সা দামের পত্রিকা, ‘মদ না গরল’ প্রভৃতি পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

মূলত ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলেই ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে সরকার বিখ্যাত, ‘তিন আইন ‘পাস করে এবং তার দ্বারা বাল্যবিবাহ ও  বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হয় এবং বিধবা বিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহ আইনসিদ্ধ হয়। সেদিন কেশব চন্দ্রকে যেসব তরুণ সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শিবনাথ শাস্ত্রী, রামকুমার বিদ্যারত্ন ,দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, শশীভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ।ইতিমধ্যে  কয়েকটি নীতিগত প্রশ্নে ‘ভারতবর্ষীয়  ব্রাহ্ম সমাজের’ অভ্যন্তরে প্রবল বিতণ্ডার সূচনা হয়।

কেশব চন্দ্র সেন ও ভারতীয় ব্রাহ্ম সমাজ

কেশবচন্দ্র ,যিশু খ্রিষ্ট ধর্ম নীতির উপরে ভিত্তি করে অনুশোচনা ও ভগবৎ প্রেম ব্রাহ্ম রীতি এবং ভক্তিবাদের সঙ্গে যিশু বাদের সংমিশ্রণ  ঘটান। কিন্তু স্ত্রী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতা সম্পর্কে প্রগতিবাদী অত্যুৎসাহী যুবগোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর এই ক্ষেত্রে বিরোধ দেখা দেয়।  ব্রাহ্মসমাজের তাই আবার ভাঙন শুরু হয়।নীতিগতভাবে বাল্যবিবাহ ও হিন্দুবিবাহ পদ্ধতির বিরোধী হয়েও কেশব চন্দ্র   হিন্দুমতে নিজ চতুর্দশ বর্ষীয়া নাবালিকা কন্যা সুনীতি দেবীর সঙ্গে কোচবিহারের নাবালক হিন্দু রাজপুত্র নৃপেন্দ্র নারায়ণের বিবাহ দেন।

‘নেটিভ ম্যারেজ অ্যাক্ট’ অনুসারে পাত্রের বয়স আঠারো এবং পাত্রের বয়স ষোলো হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে পাত্রপাত্রী উভয়েই অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। এই সব কারণে শিবনাথ শাস্ত্রী,আনন্দমোহন বসু, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, দুর্গামোহন দাশ প্রমুখ তরুণ ব্রাহ্ম বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং তাঁরা ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই মে,’ সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮০ খ্রীস্টাব্দে সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শে কেশবচন্দ্র তাঁর,’ নববিধান’ ঘোষণা করেন এবং তাঁর ব্রাহ্মসমাজ, ‘নববিধান ব্রাহ্মসমাজ’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এই পর্বে তাঁর সহযোগী ছিলেন প্রতাপচন্দ্র মজুমদার, অঘোরনাথ গুপ্ত, গিরিশচন্দ্র সেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। কালক্রমে কেশবচন্দ্র সেন পরিচালিত,’ নববিধান’ তার প্রভাব প্রতিপত্তি হারিয়ে ফেলে এবং ‘সাধারণ ব্রাহ্ম  সমাজের’ নেতৃত্বেই ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের কাজ চলতে থাকে।       

স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী ও বাণী সমূহ | Vivekananda Quotes Bangla

ইংল্যান্ড ভ্রমণ: England tour

১৮৭০ সালে কেশব চন্দ্র সেন  ইংল্যান্ডে যান  যেখানে তিনি ৬ মাস অবস্থান করেছিলেন  ইংল্যান্ডে থাকাকালীন তিনি রানী ভিক্টোরিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করার বিশেষ অনুমতি লাভ করেছিলেন। 

কেশবচন্দ্রের  দর্শনচিন্তা, Keshab Chandra Sen’s Philosophy

কেশবচন্দ্রের রাজনৈতিক চিন্তাধারার  মধ্যে ইংরেজদের প্রতি  বিদ্বেষ ভাব  সরাসরি প্রতিফলিত না হলেও, ব্যক্তি স্বতন্ত্রতা  ও সামাজিক ন্যায়ের সমর্থনে  তার উদাত্ত ভাষণগুলি স্বাধীনতা আন্দোলনের পূর্ববর্তী পর্যায়ে ভারতবাসীর মধ্যে  জাতীয় চেতনকে উদ্বুদ্ধ করতে   বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল। তর্কযুদ্ধে তিনি ইউরোপীয় মিশনারিদের হারিয়ে দিয়েছিলেন ও তাদের কে প্রত্যুত্তরে ভারতীয় ধর্ম, সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিষয়ে তাদের ছড়ানো কুৎসার মোক্ষম  জবাব প্রদান করেছিলেন ।

কেশবচন্দ্রের  দর্শনচিন্তা

কেশবচন্দ্র ছিলেন শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বিশেষ স্নেহধন্য। সেই আধ্যাত্মিক সত্ত্বা প্রাণে নিয়ে কেশব চন্দ্র সেন    ভারতবর্ষ ও ইংল্যান্ডের নানা স্থানে ধর্মপ্রচার করেন।  ১৮৭৫ সালে কেশব চন্দ্র সেন সন্ন্যাসীর আশ্রম হিসেবে সাধন কানন-এর প্রতিষ্ঠা করেনএবং ব্রাহ্ম সমাজের কয়েকজন পন্ডিতকে তিনি  ইসলাম, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান প্রভৃতি  ধর্মগ্রন্থ বিষয়ে পড়াশোনা ও  সেগুলির অনুবাদের দায়িত্ব দেন ।তিনি সর্বজনীন ধর্ম সন্ধানের উদ্দেশ্যকে পাথেয় করে ও ব্রাহ্ম সম্প্রদায়ের মানুষকে উৎসাহিত  করার জন্য ১৮৭৮ সালে ‘ভারত আশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।    তাঁর বলিষ্ঠ বাচনভঙ্গি  সেকালের প্রগতিপন্থী শিক্ষিত ভারতবাসীর মনের ভিতরে অভূতপূর্ব আলোড়ন এবং উন্মাদনার সৃষ্টি করেছিল।

সমাজ সংস্কার , Social reforms of Keshab Chandra Sen

ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করার পরে কেশবচন্দ্র সেন বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে এবং নারী শিক্ষার প্রসার, নারীর স্বাধীনতা, অসবর্ণ বিবাহ, বিধবা বিবাহ ও শ্রমিক কল্যাণের পক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলেন।  

তিনি হিন্দুসমাজের থেকে ব্রাহ্মসমাজের স্বাতন্ত্রবিধানের এ ক্ষেত্রেও বিশেষ রূপে যত্নবান ছিলেন। পরবর্তীকালে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তার বৈপ্লবিক মত বিরোধ বাধলে তিনি ও তাঁর অনুগামীরা ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করে সমাজ সংস্কারের কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। তবে ব্রাহ্মসমাজের পুনরায় ভাঙন দেখা দিলে   কেশবচন্দ্র বিভিন্ন ধর্মমতের সমন্বয়ে ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের’ সূচনা করেন  যা ‘নববিধান’ নামে পরিচিতি লাভ করে এবং কেশব চন্দ্র তাঁর   অবশিষ্ট জীবন ধর্মাচরণেই অতিবাহিত করেন বলে জানা যায়।

সমাজ সংস্কার

বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরার জীবনী

শেষ জীবন, Last days of Keshab Chandra Sen

১৮৮৩ সালের ২০ জানুয়ারি কেশব চন্দ্র সেন তাঁর শেষ ভাষণ প্রদান করেছিলেন ‘এশিয়াস মেসেজ টু ইউরোপ’-এ  যেখানে তিনি বৈজ্ঞানিক একতার ভিত্তিতে নব বিধানের প্রয়োজনের কথা পুনরুল্লেখ করেন।  তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িকতার সমাপ্তি সাধন এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদী ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে ঐক্য পুনর্গঠন করা। কিন্তু তাঁর সর্বাত্মক চেষ্টা সত্ত্বেও নববিধান তার প্রাপ্য  জনপ্রিয়তা পেতে সক্ষম হয়নি  । অভ্যন্তরীণ বিদ্বেষ ও কেশবের ভগ্ন স্বাস্থ্য এ কর্মকান্ডে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল । ১৮৮৪ সালে ৮ জানুয়ারি কেশবচন্দ্র সেনের  মৃত্যুর হয়।  মৃত্যুর পর তাঁর আন্দোলন প্রয়োজনীয় নেতৃত্বের অভাবে   প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। 

 কেশবচন্দ্রের ভূমিকা 

উপসংহার, Conclusion

সমাজ সংস্কারক হিসেবে বাংলার সমাজে  কেশবচন্দ্র  সেনের অবদান ছিল অনবদ্য। উদার ধর্মীয় মনোভাব ,সংস্কারহীনতা, জাতীয়তাবোধ প্রচার করে তিনি ঊনবিংশ শতকে সামাজিক ও জাতীয় অগ্রগতিকে বিশেষ সক্রিয় করে তোলেন।রামমোহন রায়ের উত্তরকালে ব্রাহ্ম আন্দোলনে সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে যার নেতৃত্বে তিনি ছিলেন কেশব চন্দ্র সেন।ধর্মক্ষেত্রে তাঁর অবদান তেমন বৃহৎ না থাকলেও সেটি ছিল প্রগতিবাদের প্রতীকস্বরূপ  আর সেই জন্য ই কেশবচন্দ্রের ভূমিকা  ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এবং মানুষের মনের মধ্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Frequently asked questions

কেশব চন্দ্র সেন কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ হয়েছিল?

১৯ নভেম্বর ১৮৩৮ সালে কেশবচন্দ্র সেনের জন্ম   হয় কলকাতার কলুটোলা রএক সম্ভ্রান্ত বৈষ্ণব বংশে পরিবারে। 

কেশব চন্দ্রকে কে ব্রহ্মানন্দ উপাধিটি দেন ?

মহর্ষি  দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর  

ইন্ডিয়ান মিরর পত্রিকাটি কে সম্পাদনা করেছেন?

কেশব চন্দ্র সেন  

কে কত সালে ভারত আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ?

কেশব চন্দ্র সেন ১৮৭৮ সালে ‘ভারত আশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

Recent Posts