আলোকচিত্রশিল্পী শহিদুল আলমের জীবনী, Biography of Shahidul Alam in Bengali


ড. শহিদুল আলম বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট আলোকচিত্রশিল্পী, এবং সুপরিচিত সাংবাদিক। এছাড়াও তিনি একজন সমাজকর্মী হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছেন । তিনি বাংলাদেশে দৃক পিকচার লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । ২০১৮ সালে ড. আলম টাইম ম্যাগজিনের ‘টাইম বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব ২০১৮’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

আলোকচিত্রশিল্পী শহিদুল আলমের জীবনী

জন্ম ও শৈশব বৃত্তান্ত, Early life and Childhood

শহিদুল আলমের জন্ম হয় ১৯৫৫ সালে। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশের) ঢাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। শহিদুলরা তিনজন ভাইবোন । তাঁর বাবা কাজী আবুল মনসুর ছিলেন প্রখ্যাত চিকিৎসক ও অনুজীব বিজ্ঞানী এবং মা ডা: কাজী আনোয়ারা মনসুর ছিলেন একজন শিশু মনোবিজ্ঞানী। আলমের পিতা জাতীয় জীবনে অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক “চিকিৎসাবিদ্যায় স্বাধীনতা পুরস্কার” লাভ করেন।

লক্ষ্মীরতন শুক্লা – বাংলার গর্ব ~ Biography of Laxmi Ratan Shukla in Bengali

শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন দিক, education

শহিদুল আলম ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ বোর্ডিং স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বিদেশে পাড়ি দেন। লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে তিনি বায়োকেমিস্ট্রি এবং জেনেটিক্সে স্নাতক অর্জন করেন । পরে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেডফোর্ড কলেজ থেকে ডক্টর অফ ফিলোসফি অধ্যয়ন করার জন্য লন্ডনে স্থানান্তরিত হন। লন্ডনে থাকাকালীন আলমের ছবি তোলার আগ্রহ জন্মায়।  বেডফোর্ডে ফটোগ্রাফের বিকল্প মুদ্রণ প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের জন্য তিনি একজন গবেষণা রসায়নবিদ হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ১৯৮৩ সালে, তাঁর তোলা একটি ছবির জন্য তিনি লন্ডন আর্টস কাউন্সিল থেকে ‘হার্ভে হ্যারিস’ ট্রফি জিতেছিলেন। এই পুরস্কার পেশাগতভাবে ফটোগ্রাফি শুরু করার ক্ষেত্রে তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। একই বছর, তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জৈব রসায়নে ডি.ফিল ডিগ্রি অর্জন করেন।

শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন দিক

কর্মজীবন, Career

ড. শহিদুল আলম ১৯৮৯ সালে ‘দৃক ফটো গ্যালারি’ প্রতিষ্ঠা করেন। কিছু কাল পর ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ার ফটোগ্রাফি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ২০০০ সালে বাংলাদেশে ‘ছবিমেলা’ নামে আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র চিত্রপ্রদর্শনীর সূচনা করেন। প্রতিবার এই মেলার পরিচালক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এছাড়াও ড. আলম নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ডপ্রেস ফটো প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইতিমধ্যে, ২০২২ সালের ২৭ শে জানুয়ারি, তিনি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এক্সপ্লোরার অ্যাট লার্জ’ বা দূত হিসেবে নিযুক্ত হন।

যেসব ছবির মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি হয়, revolutionary pictures

শহীদুল বাংলাদেশের নানা বিক্ষোভ এবং সহিংসতার ঘটনার ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন। জেনারেল এরশাদের পদত্যাগের পর ঢাকার রাস্তায় উল্লসিত মানুষের ছবি তোলেছিলেন শহিদুল আলম। তাঁর আলোকচিত্রগুলো বিশ্বের অনেক নামকরা সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনে ছাপা হতো, ফলস্বরূপ তাঁর প্রতিভার খ্যাতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল।

আলোকচিত্রশিল্পী শহিদুল আলম শুধুমাত্র বাংলাদেশের সংঘাতময় রাজনৈতিক ইতিহাসকেই নিজের ক্যামেরা-বন্দী করেননি, তিনি নানা বিতর্কিত বিষয়সমূহ তাঁর কাজের মাধ্যমে জনসমক্ষে তুলে ধরেছিলেন; এর মধ্যে অন্যতম ছিল “ক্রসফায়ার হত্যাকাণ্ড “। যেসব জায়গায় এই ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছিল সেসব জায়গার ছবি তুলে ধরেছিলেন তিনি।  

যেসব ছবির মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি হয়

বেস্ট বাংলা ক্যাপশন ও বায়ো কালেকশান ~ 275+ Top Bengali Captions & Bio for Facebook, Instagram

পুরস্কার ও সম্মাননা, Awards and recognition

কর্মজীবনের বিভিন্ন কার্যকলাপের দরুন ড. শহিদুল আলম প্রভূত সম্মান এবং পুরস্কার লাভ করেন। 

● মাদার জোন্স পদক, ১৯৯৩ সালে।

● আন্দ্রে ফ্রাঙ্ক ফাউন্ডেশন ও হাওয়ার্ড চ্যাপনিক পুরস্কার, ১৯৯৮ সালে

● শিল্পকলা পদক পুরস্কার (আলোকচিত্র), ২০১৪ সালে 

● চিনের ডালি ইন্টারন্যাশনাল চিত্রপ্রদর্শনীতে আজীবন সম্মাননা, ২০১৭ সালে

● লুসি ফাউন্ডেশন প্রদত্ত মানবতাবাদী পুরস্কার (হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড) ২০১৮,

● স্পেশাল প্রেজেন্টেশন অ্যাওয়ার্ড ২০১৯, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অফ ফটোগ্রাফি

পুরস্কার ও সম্মাননা

পুলিশ কর্তৃক আটক, Shahidul Alam under police custody

৫ আগস্ট ২০১৮ তারিখে শহিদুল আলম আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার অনুষ্ঠান সংবাদে লাইভে যোগ দেন। ২০১৮-র ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন সম্পর্কে বাংলাদেশ থেকে সংবাদ উপস্থাপকের সঙ্গে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন তিনি । সেই রাতেই, সাড়ে ১০টার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন শহিদুল আলমকে ধানমন্ডির বাসা থেকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় পরিবার ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করার কারণে, পরের দিন গোয়েন্দা পুলিশ জনসমক্ষে স্বীকার করে যে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তাঁকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত আইনে দায়ের করা এক মামলায় গ্রেফতার করা হয়। ৬ ই আগস্ট ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম শহিদুলের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে দেন এবং তাঁর সাত দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন। রিমাণ্ড শেষ হলে ১২ ই আগস্ট তাঁকে পুনরায় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

১৪ ই আগস্ট ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফের জামিন আবেদন করা হয়, কিন্তু আদালত ১১ ই সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য করে দেয়। এর পর ১৯ আগস্ট যখন শুনানির তারিখ এগিয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হয় তখন আদালত কর্তৃক তা গ্রহণ করা হয়নি । এই অবস্থায় ২৬ শে আগস্ট আলমের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চাওয়া হলে, আদালত শুনানির জন্য তা গ্রহণ করেননি। পরে আবার ২৮ আগস্ট, মঙ্গলবার হাইকোর্টে তাঁর জামিনের আবেদন করা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর আপীলের রায়ের শুনানির দিন বদলে ৪ সেপ্টেম্বর করা হবে বলে জানানো হয়। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জামিনের শুনানিতে উচ্চ আদালতের দুইজন বিচারপতির মধ্যে একজন বিব্রত বোধ করায় সেই জামিন আবেদনের শুনানীর কাজ সমাপন করা হয় নি।

পুলিশ কর্তৃক আটক

প্রথম শ্রেণির বন্দির সুবিধা না দেওয়ায় দুইবার আবেদন করার হলে, উচ্চ আদালত তা খারিজ করে দেয় এবং আলমকে প্রথম শ্রেণির বন্দির সুবিধা দেওয়ার আদেশ বহাল রাখে উচ্চ আদালত । উক্ত মামলায় ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ শহিদুল আলমের জামিন ফের নাকচ করে দেন। শেষ পর্যন্ত ১৫ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে বহুল বিতর্কিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় তাঁর জামিন প্রশ্নে বাংলাদেশ হাইকোর্ট যথাযথ রায় দেন এবং শহিদুল আলম কারাগারের বন্দী জীবন থেকে নিস্তার পান। সংবাদ মাধ্যম বিবিসি বাংলাকে শহিদুলের আইনজীবী জানান, “মি: আলমের বিপক্ষে পুলিশ যে এফআইআর দাখিল করেছে সেটির সাথে আল-জাজিরাতে তাঁর দেয়া সাক্ষাৎকারের কোন মিল নেই” এই বিষয়টিকে বিবেচনা করে হাইকোর্ট থেকে জামিন দেওয়া হয়।

সম্রাট অশোকের জীবনচরিত – Life Story of emperor Ashoka in Bengali

গ্রেফতারি বিষয়ে জনগণের প্রতিক্রিয়া, Mass reaction against the arrest of Shahidul Alam

শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করার পর বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। গ্রেফতারের প্রায় পরপরই নিঃশর্তে শহিদুলের মুক্তির দাবি রেখে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, রিপোর্টার্স উইথআউট বর্ডার্সের মত দেশি তথা বিদেশি ২৪ টি সংস্থা বিবৃতি প্রকাশ করে। এছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, যেমন ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা টিউলিপ সিদ্দিকী, বাংলাদেশ হতে নির্বাসিতা লেখিকা তসলিমা নাসরিন, নোবেল বিজয়ী খ্যাতনামা ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ সম্মাননা প্রাপ্ত আলোকচিত্রী রঘু রাই, ব্রিটিশ টিভি তারকা কনি হক সহ আরো অনেকে শহিদুলের মুক্তি চান ও তাঁকে সমর্থন করেন।

শহিদুল আলমের মুক্তির দাবি নিয়ে লেখা এক বিবৃতিতে ১১ জন নোবেল বিজয়ী ও ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক সাক্ষর করেছিলেন। নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিবর্গ ছিলেন আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, মাইরিয়াড ম্যাগুইরে, বেটি উইলিয়ামস, অস্কার এরিয়াস, শিরিন এবাদি, রিচার্ড যে. রবার্টস, হোসে রামোস-হর্তা, তাওয়াক্কল কারমান, জোডি উইলিয়ামস, মোহাম্মদ ইউনূস, লেহমাহ বয়ই প্রমুখ; এবং অরুন্ধতী রায়, নোম চম্‌স্কি সহ পাঁচজন বিশ্ববরেণ্য লেখকও তাঁর মুক্তির দাবী করেন।

সকলে ন্যায়বিচার ও তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে একই সঙ্গে স্বচ্ছতার দাবি জানিয়েছিলেন। ড. শহিদুল আলমের ভাগনি ছিলেন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত স্থপতি সোফিয়া করিম। তিনি চিঠির মাধ্যমে শহিদুল আলমের অধিকার ও মতপ্রকাশ করার স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধার আহ্বান জানিয়ে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার দাবি করেন। 

গ্রেফতারি বিষয়ে জনগণের প্রতিক্রিয়া

উপসংহার, conclusion

শহীদুল আলম চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন এবং তাঁর ছবিগুলো প্রায় সকল পশ্চিমা মিডিয়া প্রধান আউটলেট সমূহে প্রকাশিত হয়েছে। আলমের শৈল্পিক দৃষ্টিকোণের বিরল অন্তর্দৃষ্টি জনগণের মনে তাঁর জায়গা চিরস্মণীয় করে দিয়েছে।

 আলমের শৈল্পিক দৃষ্টিকোণের বিরল অন্তর্দৃষ্টি জনগণের মনে তাঁর জায়গা চিরস্মণীয় করে দিয়েছে।

Frequently asked questions

শহীদুল আলম কে ছিলেন?

শহিদুল আলম বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট আলোকচিত্রশিল্পী, এবং সুপরিচিত সাংবাদিক

শহিদুল আলমের জন্ম কবে হয় ?

১৯৫৫ সালে।

শহীদুল 'দৃক ফটো গ্যালারি' কবে প্রতিষ্ঠা করেন?

১৯৮৯ সালে।

Recent Posts