বর্তমান পৃথিবীতে মোবাইল, কম্পিউটারের মত বিভিন্ন ডিভাইস অচিরেই আমাদের নিত্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে। এই সবকিছু যেন আমাদের জীবনের অতি প্রয়োজনীয় এক অংশ, এসব ছাড়া আমরা এক পা চলার কথাও ভাবিনা এখন। যেহেতু আমরা এই ডিজিটাল দুনিয়াতে বসবাস করছি, সেকারণেই বর্তমান সময়ের প্রযুক্তি ও চিন্তা-ধারাও বেশ উন্নত ধরনের।
যেমন ধরুন আমরা প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ফাইল, ছবি, স্টেটমেন্ট, মেইল, অ্যাকাউন্ট ডাটা ইত্যাদি আমাদের কম্পিউটার বা হাতের কাছে থাকা স্মার্টফোনটিতে সংরক্ষণ করে রাখি, যা হয়তো আগেকার সময়ে লিখে রেখে বিভিন্ন দলিলের মাধ্যমে বা নথি হিসেবে সংরক্ষণ করা হত।
তবে অনেক সময় নিজেদের ভুলের কারণে বা দুর্ঘটনাক্রমে মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে ছবি বা ফাইল ডিলিট হয়ে যায়। তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না হলে সেটা নিয়ে মাথা ঘামায় না কেউ, কিন্তু সেটি যদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বা প্রিয় কোনো ছবি হয় তখন কষ্টের আর শেষ থাকে না। এরূপ দুর্ঘটনা প্রায়ই আমাদের সাথে ঘটে থাকে।
ভুল করে অনেক সময়ই গুরুত্বপূর্ণ জানা সত্ত্বেও ফাইল, ফোল্ডার বা ছবির কোনো কপি অথবা ব্যাকআপ রাখি না আমরা। তাই গুরুত্বপূর্ণ সব ফাইল আর ছবিগুলো নিয়ে ইউজারের উদ্বেগ আর ভোগান্তিরও কোনো শেষ থাকে না।
জরুরী তথ্য সঞ্চয় করার উপায় কি কি? What are the ways to store emergency information?
স্মার্টফোন বা কম্পিউটার থেকে আমরা মাঝে মাঝে অপ্রয়োজনীয় ফাইলগুলো ডিলিট করে থাকি। তবে কখনো কখোনো অজান্তে এমন অনেক ফাইল ডিলিট হয়ে যায় যেগুলো অত্যন্ত দরকারি ছিল। এরপরে হন্যে হয়ে ফাইল ব্যাকআপ করার চেষ্টা করতে থাকি আমরা। তবে অ্যাপ স্তরে এমন অনেক ফাইল ব্যাকআপ সফটওয়্যার বা অ্যাপ উপলব্ধ থাকে যা কেবল প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু সঠিকভাবে কাজ করেনা। সেক্ষেত্রে কম্পিউটার ও স্মার্টফোনের জন্য এমন কয়েকটি সফটওয়্যার ও অ্যাপের কথা জেনে রাখা উচিত যেগুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই ছবি, অডিও, ভিডিও ফাইল ডিলিট হয়ে গেলে ফেরত পাওয়া যাবে।
আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তি রচনা, Best composition about Modern life and technology in Bengali
ফাইল বা ছবিগুলোর ব্যাকআপ রাখুন, Backup files or images
কারও ডিভাইস থেকে ফাইল, ফোল্ডার বা গুরুত্বপূর্ণ ছবি হারিয়ে যাওয়াটা যথেষ্ট যৌক্তিক, তবে এই যুগে থেকেও এসব কিছুর ব্যাকআপ না রাখাটা সত্যিই অযৌক্তিক ব্যাপার, কারণ বর্তমানে ব্যাকআপ এবং ক্লাউড স্টোরেজ অ্যাপ্লিকেশনগুলির প্রচলন ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে, অন্যদিকে এর ব্যবহারও খুবই সহজ। আগে থেকেই আপনার সকল ডাটা সমূহের ব্যাকআপ রাখলে তা কখনও দুর্ঘটনাজনিত কারণে ডিলিট হয়ে গেলেও চিন্তার কোনো ব্যাপার থাকে না।
বিশেষ করে আপনার দরকারি সব ডেটার ব্যাকআপ যদি না রাখেন সেক্ষেত্রে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এর জন্য ব্যাকআপ হিসেবে ফাইল, ছবি, ফোল্ডার অন্য একটি ড্রাইভে সংরক্ষণ করতে পারেন অথবা পেন ড্রাইভে কপি করে রাখতে পারেন, যা মূলত ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করবে।
চন্দ্রযান-২ : সফল না ব্যর্থ, Know whether Chandrayaan-2 a success or failure in Bengali
ফাইলগুলো সংরক্ষণের জন্য গুগল ফটোজ ব্যবহার করুন, Use Google Photos to save the files
ছবি সংরক্ষণ করার জন্য গুগল ফটোজ অ্যাপটি খুবই কার্যকরী একটি সিস্টেম। এর সাহায্যে অনেক ছবি সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। এতে আপনি ১৫ গিগাবাইট পরিমাণ স্টোরেজ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে কোনো কারণে ১৫ গিগাবাইটের বেশি জায়গার প্রয়োজন হলে আপনাকে কিছু টাকার বিনিময়ে স্টোরেজ ক্রয় করে তারপর ব্যবহার করতে হবে। প্রায় সকল এন্ড্রয়েড ফোনেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে গুগল ফটোজ অ্যাপ্লিকেশনটি ইন্সটল করা থাকে।
কম্পিউটারের জন্যও এই অ্যাপ্লিকেশনটি উপলব্ধ রয়েছে। তবে এর ব্যবহারের জন্য অবশ্যই একটি ইমেইল একাউন্ট এর প্রয়োজন হয় এবং তাতে সাইন ইন করা থাকতে হয়। আবার এই ই-মেইল একাউন্টটি অবশ্যই জি-মেইল এ হতে হবে।
স্মার্টফোনের সাহায্যে আমরা যেসব ছবি তুলি সেগুলো আমরা কিছু না করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই গুগল ফটোজ-এ সংরক্ষিত হয়ে থাকে। তবে এরজন্য অবশ্যই অ্যাপের সেটিং কাস্টমাইজ করে রাখা প্রয়োজন হবে, কারণ সেটিং কাস্টমাইজড না করা থাকলে পরবর্তী সময়ে গুগল ফটোজ থেকে ছবিগুলো ডাউনলোড করা যায় না।
আপনার কোনও ছবি যদি কোনোভাবে ডিলিট হয়ে যায়, তবে সর্বপ্রথম গুগল ফটোজে সার্চ করে দেখতে পারেন; কারণ, আপনার ডিভাইস থেকে কোনো ছবি ডিলিট হয়ে গেলেও গুগল ফটোজে তা সংরক্ষিত থাকবে। এরপর আপনি চাইলে সেখান থেকে আবার ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
মানব কল্যাণে বিজ্ঞান, Best compostion about Science in human welfare in Bengali
ফাইল সমূহ গুগল ড্রাইভের সংগ্রহে রাখুন, Keep the files in a Google Drive collection
যেকোনো রকম ফাইল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুগল ড্রাইভ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় একটি অ্যাপ্লিকেশন। গুগল ফটোজ এর মত গুগল ড্রাইভেও আপনি ১৫ গিগাবাইট পর্যন্ত ফ্রি স্পেস পেয়ে যাবেন৷ আবার বেশি স্পেসের প্রয়োজন হলে কিনে নিতে পারেন। ড্রাইভে আপনি নিজের সকল গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সংরক্ষণ করতে পারবেন।
এটি সিকিউর সিস্টেম, যেখানে আপনি নিরাপদে আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথা ব্যক্তিগত সকল ডেটা এবং ফাইল সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। আপনার কোনো ফাইল হারিয়ে গেলে বা ডিলিট হয়ে গেলে প্রথমেই গুগল ড্রাইভে আছে কি না তা খোঁজ করতে পারেন। তবে এর জন্য গুগল একাউন্ট দ্বারা লগ ইন থাকা প্রয়োজন। গুগল ড্রাইভের সংগ্রহে থাকা ফাইল খুঁজে পেলে তা ডাউনলোড করে পুনরুদ্ধারও করতে পারবেন।
ডিলিট হওয়া তথ্য ফিরিয়ে আনার উপায় কি কি? way to recover deleted data
ডেটা পুনরুদ্ধার পরিষেবা, Data recovery services
ডিলিট হওয়া তথ্য ফিরিয়ে আনার ডেটা পুনরুদ্ধার পরিষেবা গ্রহণ করতে পারেন। যদি ডিলিট হয়ে যাওয়া ফাইল বেশি পরিমাণে থাকে তবে প্রথম থেকেই একটি ডেটা পুনরুদ্ধার পরিষেবা সার্ভিস গ্রহণ করতে পারেন। যা আপনার করাপটেড ফাইলগুলিকে পুনরুদ্ধার করতে এবং চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে এমন ডেটা পুনরুদ্ধার করতে সহায়ক হবে।
যদি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ডকুমেন্ট বা এক্সেল স্প্রেডশীট সংক্রান্ত বেসিক ফাইলগুলো পুনরুদ্ধারের বিষয়টি আসে তবে আপনার সম্ভবত ছোট পরিষেবার একটি প্রয়োজন হবে। তবে আপনি যদি কোনো গ্রাফিক ডিজাইন বা ফটোগ্রাফির বিষয়ে বড় ফাইল নিয়ে কাজ করে থাকেন, সেক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ডেটা পুনরুদ্ধার পরিষেবার প্রয়োজন হতে পারে।
আধুনিক শিক্ষায় ইন্টারনেট, Best use of Internet in Modern education in Bengali
Recurra File Recovery
এই অ্যাপ কেবলমাত্র Windows এর ক্ষেত্রে কার্যকর, তবে এটি খুবই উন্নত মানের। এই অ্যাপটির কর্মক্ষমতার প্রধান আকর্ষণ হল এই যে আপনি আপনার কাছে থাকা মেমোরি কার্ড, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস, আই ও এইওস ইত্যাদি যেকোনো ডিভাইস থেকে কোনো তথ্য মুছে ফেলা সত্ত্বেও সেই তথ্যগুলো অ্যাপটির সাহায্যে আপনি সেই একই ফরম্যাটে ফেরত পেয়ে যাবেন।
Dr.Fone
আজকের এই ডিজিটাল যুগে দাঁড়িয়ে খুবই জনপ্রিয় এবং উপকারী অ্যাপ হচ্ছে এটি। ওয়েব জগতে অ্যাপটি খুবই বিখ্যাত। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এটি আপনার ডিভাইসে থাকা প্রায় সকল প্রকার তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। উক্ত সফটওয়্যারটি windows এবং macos তেও উপলব্ধ। তবে ফ্রি ভার্সন থেকে কেবলমাত্র কিছু সংখ্যক তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবেন, সফটওয়্যার টি কিনে নিলে অনায়াসে এর ব্যবহার করতে পারবেন।
Dikdigger
এই অ্যাপটি কম্পিউটারে থাকা বিলোপ হয়ে যাওয়া তথ্য পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে। অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যায়। এই অ্যাপ আপনার ফোনে থাকা মেমোরি স্টোরেজকে স্ক্যান করে নিয়ে লিস্ট তৈরি করে দেবে, যা দেখে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে কি কি তথ্য আপনি সংরক্ষণ করে রাখতে চান। এর প্রিমিয়াম ভার্সনটিতে আপনি সকল প্রকার তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবেন, তবে অ্যাপটির ফ্রি ভার্সনে কেবলমাত্র ছবি এবং ভিডিও সংরক্ষণ করা সম্ভব।
Mini Tool Android Recovery
যদি কেউ বিনামূল্যে নিজের ডিলিট হয়ে যাওয়া তথ্য পুনরুদ্ধার করতে চান তবে এই অ্যাপটি সবচেয়ে উপযুক্ত। অ্যাপটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়া যায় এবং প্রায় সব রকম তথ্যই পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম। কল লগ, এস এম এস, মিডিয়া ফাইল, ডকুমেন্টস, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ সবকিছুর ডেটাই এই অ্যাপের দ্বারা পুনরুদ্ধার করা যায়।
EaseUS
দীর্ঘ কিছু বছরের একটি ট্র্যাক রেকর্ড দ্বারা প্রমাণিত যে, ডিলিট হয়ে যাওয়া ডেটা বা ফাইল ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে EaseUS উপযুক্ত। এটি ম্যাক ও পিসি উভয় ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেই কার্যকরী। এমনকি মোবাইল ডিভাইসে থাকা ফাইলও পুনরুদ্ধার করতে পারে। EaseUS এর বিনামূল্যের সংস্করণটি ২ গিগাবাইট পর্যন্ত মুছে ফেলা ডেটা পুনরুদ্ধার করতে পারে। তাছাড়া পুনরুদ্ধারের আগে ফাইলগুলির পূর্বরূপ আপনাকে দেখার অনুমতি দেয়। এতে আপনি নিশ্চিত করতে পারবেন যে আপনি সঠিক তথ্য পুনরুদ্ধার করেছেন কি না।
Dumpster Bin File Recovery
স্মার্টফোন থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে ডিলিট হয়ে যাওয়া ফাইল রিকভারির জন্য ছোট একটি অ্যাপ হল এই Dumpster Bin File Recovery। এই অ্যাপ ব্যবহারের সবচেয়ে সুবিধা হল এতে ইন্টারনেট কানেকশনের প্রয়োজন হয়না। ডিলিট হওয়া ফাইল, ফটো, ভিডিও ফ্রিতেই ডাউনলোড করতে পারেন। এছাড়া আপনি চাইলে এই অ্যাপ দ্বারা ব্যাকআপও রাখতে পারেন। অ্যাপটি লক করেও রাখা যায়, ফলে প্রাইভেসি নিয়েও কোনো সমস্যা নেই।
- কিভাবে হোয়াটস্যাপ এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক সক্রিয় করবেন | Bengali Guide to set Fingerprint Lock in Whatsapp
- হোয়াটস্যাপ এ টেক্সট ফরম্যাট করার সহজ উপায় | How to format text in Whatsapp in Bengali
- ফোনের লক বাটন খারাপ হয়ে গেছে ? জেনে নিন সহজ উপায়ে হার্ডওয়্যার লক বাটন ছাড়াও ম্যানেজ করা
- ইউটিউব ভিডিও ও অডিও ডাউনলোড করার ৭টি সহজ উপায়
- মোবাইল থেকে কাটুন লোকাল ট্রেন এর টিকিট, প্ল্যাটফর্ম টিকেট, জানুন UTS অ্যাপ এর ব্যবহার
উপসংহার, Conclusion
যেকোনো ডেটা সঞ্চয়ের সবচেয়ে ভালো উপায় ব্যাকআপ রাখা, তাহলে ফাইল নিয়ে আপনার খুব একটা উদ্বিগ্ন হবার কোনো কারণ থাকবেনা। আপনি চাইলে উপরিউক্ত পদ্ধতি বা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে তথ্যগুলোর ব্যাকআপ রাখতে পারেন।
এতে আপনার প্রয়োজনীয় অডিও, ফটো, ভিডিও, ফাইল ব্যাকআপের মাধ্যমে আরও সুরক্ষিত থাকবে। তবে ভুল করে ডিলিট হয়ে গেলেও উপরে উল্লেখ করা অ্যাপের সাহায্যে যাবতীয় তথ্য ফিরে পেয়ে যাবেন।