জন এফ. কেনেডির জীবনী, Best Biography of John F. Kennedy in Bengali



ইতিহাসের সবচেয়ে নমনীয় চরিত্রগুলোর অন্যতম জন ফিট্‌জেরাল্ড কেনেডি বা জন এফ. কেনেডি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ তম রাষ্ট্রপতি। তিনি জনগণের কাছে JFK নামেও সুপরিচিত। ইতিহাসবিদরা এখনও অবধি কেনেডিকে আমেরিকান ইতিহাসের সেরা-প্রিয় রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে গণ্য করেন। 

জন এফ. কেনেডির জীবনী

জন এফ. কেনেডির জন্ম ও পরিবার সম্পর্কে কিছু তথ্য, Some facts about Kennedy’s birth and family

জন এফ কেনেডি ১৯১৭ সালের ২৯ মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত শহর ম্যাসাচুসেট্স এর ব্রুকলীনের এক বিখ্যাত ক্যাথলিক পরিবারে জন্ম হয় তাঁর। কেনেডির পূর্বপুরুষরা ছিলেন আয়ারল্যান্ডের অভিবাসী। কেনেডির পিতা জোসেফ পেটরিক কেনেডি পেশাগত ভাবে প্রথমে একজন আলু ব্যবসায়ী ছিলেন, পরে তিনি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রদূত হিসাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অন্যদিকে মা রোজ এলিজাবেথ ফিটজিরাল্ড কেনেডি ছিলেন একজন সমাজ কর্মী। 

জন এফ. কেনেডির জন্ম ও পরিবার সম্পর্কে কিছু তথ্য

ইলন মাস্কের জীবনী, Best ever biography of Elon Musk in Bengali

জন এফ. কেনেডির শিক্ষাজীবনের ইতিহাস, History of Kennedy’s educational career

জন এফ কেনেডি নিজের শৈশবে কালে ১০ টি বছর ব্রুকলীনে অতিবাহিত করেছিলেন। সেখানকার এডওয়ার্ড ডেমোশন স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেছিলেন তিনি।  পরে ১৯২৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কেনেডি নিজের পরিবারের সঙ্গে নিউইয়র্ক সিটির রিভারডেলে পাড়ি জমান। এর দুই বছর পরই আবার নিউইয়র্কের ব্রোঙ্কসভিলে স্থানান্তরিত হন। পরবর্তীতে ১৯৩৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হার্ভার্ড কলেজে ভর্তি হন তিনি। কেনেডি সেখান থেকে ১৯৪০ সালে ‘আপিসমেন্ট ইন মিউনিখ’ শীর্ষকের থিসিস সম্পন্ন করেন ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

জন এফ. কেনেডির শিক্ষাজীবনের ইতিহাস

ডোনাল্ড ট্রাম্প এর জীবনী, Best ever biography of President Donald Trump in Bengali 

জন এফ. কেনেডির  সাংবাদিকতা, John F. Kennedy’s journalism

১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে, কেনেডির বাবা নিজের বন্ধু উইলিয়াম হার্স্টের পরিচালিত হার্স্ট সংবাদপত্রের জন্য বিশেষ সংবাদদাতা হিসাবে কেনেডির জন্য একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন। সংবাদপত্রের কাজ কেনেডির দক্ষতাকে জনসাধারণের চোখে তুলে ধরেছিল এবং তাঁকে সম্ভাব্য ক্যারিয়ার হিসেবে সাংবাদিকতায় এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছিল। তিনি সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করার সময় বার্লিনে গিয়েছিলেন এবং পটসডাম সম্মেলন সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলি সম্পর্কে তথ্য সমূহ সংগ্রহ করে খবর প্রকাশ করেছিলেন।

জন এফ. কেনেডির  সাংবাদিকতা

রাস্কিন বন্ড, ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত ভারতীয় লেখকের জীবনী, Biography of famous author Ruskin Bond in Bengali   

রাজনীতিতে যোগদানের পর কেনেডির বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, Kennedy’s various experiences after joining politics

 ১৯৪১ সালে কেনেডি মার্কিন নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন এবং এর দু’বছর পরই তাঁকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে প্রেরণ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কেনেডি সাহসিকতার সাথে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে Motor Torpedo Boat PT-109 এর কমান্ডার হিসেবে নিজ দায়িত্ব পালন করেন। পিতা জোসেফ পি. কেনেডি সিনিয়র এর উৎসাহ এবং সহযোগিতার সাথে কেনেডি রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল অবধি ডেমক্রেটদের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।

রাজনীতিতে যোগদানের পর কেনেডির বিভিন্ন অভিজ্ঞতা

কেনেডি ১৯৫২ সালে সিনেটের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির মাঠে তাঁর গুরুত্ব ক্রমশ পৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তিনি ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সিনেটে ডেমক্রেটদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। কেনেডির নিজের গুণমুগ্ধদের কাছে ক্যারিশম্যাটিক নেতা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তবে তিনি ছিলেন বহু গুণের অধিকারী। যুক্তরাষ্ট্রকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে রক্ষা করেছিলেন তিনি। এছাড়াও কেনেডি বর্ণবাদে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রকে এক সুতোয় গাঁথার কাজ করেছিলেন। 

ওয়ান্ডার মুন্না ওরফে ইন্দ্রাণী বিশ্বাসের জীবনী, Biography of Wonder Munna aka Indrani Biswas in Bengali

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, Presidential election

১৯৬০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি তথা রিপাবলিকান প্রার্থী এবং ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির হোতা রিচার্ড নিক্সনকে পরাজিত করেন তিনি। নির্বাচনে জয়ী হয়ে মার্কিনিদের দুঃস্বপ্নের ইতি টেনেছিলেন কেনেডি।  কেনেডিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রোমান ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কম বয়সী যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করেন তিনি ।

থিওডর রজভেল্টের পর আমেরিকার দ্বিতীয় কনিষ্টতম আইরিশ আমেরিকান রাষ্ট্রপতি ছিলেন কেনেডি। একজন সুবক্তা হিসেবে খ্যাত ছিলেন তিনি। ক্ষমতাসীন থাকাকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তৎকালীন সবচেয়ে বড় সঙ্কট, ১৯৬২ সালের কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট মোকাবেলা করেন তিনি । তাছাড়া কেনেডিই একমাত্র আমেরিকান রাষ্ট্রপতি যিনি পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করেছেন। 

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

বিশ্ব বরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী, Biography of renowned poet Rabindranath Tagore in Bengali

কেনেডির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও হত্যা, Conspiracy against Kennedy and assassination

রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার মাত্র তিন বছর পর ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর গুলিতে নিহত হন কেনেডি। টেক্সাস স্টেটের ডালাসে ডালাস নগরী দিয়ে সস্ত্রীক একটি ছাদ খোলা গাড়িতে করে যাওয়ার পথে আততায়ীর গুলিবিদ্ধ হন তিনি। নিহত হওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের এই সুদর্শন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির বয়স ছিল মাত্র ৪৬ বছর।

বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা গেছে যে লি হার্ভে অসওয়াল্ড নামের সাবেক মেরিন সেনার এক স্নাইপার তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছিল। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকের বর্ণনায় জানা যায় সেই দিনটি ছিল শুক্রবার, ঘটনা বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঘটেছিল। ঘটনার সাক্ষীদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন যে, তারা ৩টি নয় বরং ৪টি গুলির আওয়াজ শুনেছিলেন। কেনেডি আততায়ী হার্ভিকে এই ঘটনার জন্য অভিযুক্ত করা হলেও এই ঘটনার কোনো বিচার হয়নি, কারণ উক্ত ঘটনাটির দুইদিন পরই জ্যাক রুবি নামক একজনের গুলিতে হার্ভি নিহত হয়েছিল। তবে কেনেডির মৃত্যু নিয়ে মার্কিনীদের মধ্যে ভিন্ন কিংবদন্তী রয়েছে।

প্রেসিডেন্টকে হত্যা করার জন্য হামলা হতে পারে এই রকম কিছু গুজব বেশ কয়েকদিন ধরেই বাতাসে ভাসছিল। তাও সেদিন তাঁকে কেন এত কম নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হল, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন ছিল। অনেকেরই ধারণা যে, এই হত্যায় আমেরিকার নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং উচ্চ পর্যায়ের লোকদের হাত আছে, নয়তো দিন দুপুরে আমেরিকার মত দেশের রাষ্ট্রপতিকে এভাবে গুলি করে মেরে ফেলা অসম্ভব একটা কাজ।

কেনেডির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও হত্যা

বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং আলামত থেকে অনেকেরই ধারণা যে, জন এফ কেনেডি এবং তাঁর ছোট ভাই রবার্ট কেনেডির হত্যার সঙ্গে ইসরাইল জড়িত। উল্লেখ্য এই রবার্ট কেনেডিও ১৯৬৮ সালের ৫ই জুন গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছিলেন। মার্কিনীদের ধারণা অনুযায়ী ১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নে প্রার্থী হওয়ার ফলেই আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন তিনি।

জিনতত্ত্ববিদ মাকসুদুল আলমের জীবনী, Biography of Bangladeshi scientist Maqsudul Alam in Bengali

রাষ্ট্রপতি হিসেবে  জন এফ. কেনেডির জনপ্রিয়তা ও গুরুত্ব, John F Kennedy’s popularity and importance as President 

জন এফ. কেনেডি ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। নিহত হওয়ার পূর্ব অবধি তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মার্কিনীদের প্রিয় রাষ্ট্রপতি এফ কেনেডির মৃত্যুর বহু বছর পেরিয়ে গেলেও অনেকের কাছেই এখনও তিনি এক অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন যাঁকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই।

বর্তমান সময় অবধি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বহু রাষ্ট্রপতি ক্ষমতায় এসেছেন, আবার চলেও গেছেন। তবে খুব কমসংখ্যক প্রেসিডেন্টই আছেন যাদের মানুষ মনে রেখেছে। নিঃসন্দেহে স্মরণীয় রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় প্রথম দিকেই ঠাঁই হয়েছে  ৩৫ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির। তাঁকে নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে, তৈরি করা হয়েছে চলচ্চিত্রও। বেঁচে থাকতে তিনি যতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, মৃত্যুর পরও ততটাই শ্রদ্ধার অধিকারী হয়েছেন কেনেডি। 

রাষ্ট্রপতি হিসেবে  জন এফ. কেনেডির জনপ্রিয়তা ও গুরুত্ব

জন এফ. কেনেডির বৈবাহিক জীবন, John F. Kennedy’s married life

রাজনৈতিক জীবনে পথচলার পাশাপাশি কেনেডি নিজের ব্যক্তিগত জীবনকেও গুছিয়ে নিতে দেরি করেননি। ১৯৫৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জ্যাকুলিন লি বেভিয়ার নামের এক মহিলা সাংবাদিকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তিনি সিনেটর নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পর তাদের বিয়ে হয়েছিল।

জন এফ কেনেডির স্ত্রী জ্যাকুলিন লি বেভিয়ার সত্যিকার অর্থেই সুন্দরী এবং মোহনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। তবে বিয়ের পরবর্তী সময়ে অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো এবং প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে জড়িয়ে অনেক কানাঘুষা শুরু হয়েছিল। ১৯৫৫ সালে একটি গর্ভপাত এবং ১৯৫৬ সালে একটি মৃত প্রসবের পরে ১৯৫৭ সালে তাদের কন্যা ক্যারোলিন জন্মগ্রহণ করেন। কেনেডি নির্বাচিত হওয়ার ১৭ দিন পরে ১৯৬০ সালের নভেম্বরের শেষে পুত্র জন ফিটজেরাল্ড কেনেডি জুনিয়র জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে ১৯৯৯ সালে তিনি এক বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।

জন এফ. কেনেডির বৈবাহিক জীবন

উপসংহার, Conclusion 

 জন ফিট্‌জেরাল্ড কেনেডির হত্যাকাণ্ড বিশ্বজুড়ে যেন এক শকওয়েভ ছড়িয়েছিল। সেই ঘটনাই কেনেডিকে জীবনের চেয়ে বড় বীরত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত করেছিল। কেনেডির পরিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরিবারগুলির মধ্যে একটি ছিল, যারা ফেডারেল এবং রাজ্য উভয় পর্যায়ে একজন রাষ্ট্রপতি, তিনজন সিনেটর, তিনজন রাষ্ট্রদূত এবং একাধিক অন্যান্য প্রতিনিধি এবং রাজনীতিবিদ তৈরি করেছে।

Frequently asked questions

জন এফ. কেনেডি কে ছিলেন ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ তম রাষ্ট্রপতি।

কেনেডি কবে জন্মগ্রহণ করেন?

-১৯১৭ সালের ২৯ মে।

 জন এফ. কেনেডি কবে রাষ্ট্রপতি হন?

১৯৬০ সালে।

জন এফ. কেনেডির মৃত্যু কিভাবে হয়?

কেনেডি ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ফলে নিহত হন।

Recent Posts