ভারতের ১৫ তম রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু’র জীবনী, Biography of Draupadi Murmu, the 15th President of India in Bengali



দ্রৌপদী মুর্মু হলেন একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি। তিনি ইতি পূর্বে ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঝাড়খণ্ড রাজ্যের নবম রাজ্যপাল হিসাবে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওড়িশা রাজ্য থেকে আগত দ্রৌপদী মুর্মু হচ্ছেন ভারতের ঝাড়খণ্ডের প্রথম রাজ্যপাল যিনি পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেছিলেন। অন্যদিকে তিনি রাজনীতির ইতিহাসে প্রথম তফসিলি উপজাতির অন্তর্গত ব্যক্তি, যিনি ভারতের রাষ্ট্রপতির পদে মনোনীত হয়েছেন।

ভারতের ১৫ তম রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু’র জীবনী

দ্রৌপদী মুর্মুর জন্ম এবং শৈশবকাল, Birth and Childhood of Draupadi Murmu

দ্রৌপদী মুর্মুর জন্ম হয় ১৯৫৮ সালের ২০ জুন। তিনি ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ জেলার উপরবেদা গ্রামের একটি সাঁওতালি উপজাতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দ্রৌপদীর পরিবার তাঁর নাম রাখে পুটি টুডু।  পরবর্তী সময়ে তাঁর স্কুলের শিক্ষিকা নামটি পরিবর্তন করে দ্রৌপদী রাখেন। তাঁর বাবা বিরাঞ্চি নারায়ণ টুডু ছিলেন একজন কৃষক। তাছাড়া বর্তমান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বাবা এবং ঠাকুরদা উভয়েই সেকালের পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থার অধীনস্থ গ্রাম পরিষদের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সুতরাং দ্রৌপদী মুর্মু শৈশব কাল থেকেই রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। ভারতের সবচেয়ে প্রত্যন্ত এবং অনুন্নত জেলাগুলির অন্তর্গত এমন একটি গ্রামে তথা  দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করছিল এমন একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করার ফলে, দ্রৌপদী মুর্মুর শৈশবকাল ছিল বিভিন্ন চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ।

দ্রৌপদী মুর্মুর জন্ম এবং শৈশবকাল

বিশ্ববন্দিত কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত’র জীবনী, Biography of Michael Madhusudan Dutta in Bengali   

শিক্ষা জীবনের ইতিহাস, Educational life history

 দ্রৌপদী মুর্মু উপরবেদার স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। পাঁচ বছর বয়সে, তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ভুবনেশ্বরে চলে আসেন। সেখানে তিনি গার্লস হাই স্কুল ইউনিট-২ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং পরবর্তী সময়ে রমা দেবী মহিলা কলেজ থেকে কলা বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। 

শিক্ষা জীবনের ইতিহাস

বিশিষ্ট ধর্ম সংস্কারক কেশবচন্দ্র সেনের জীবনী, Biography of Keshab Chandra Sen in Bengali

দ্রৌপদী মুর্মু ও তাঁর  ব্যক্তিগত জীবন, Personal life of Draupadi Murmu

ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু দাম্পত্য জীবনে অনেক ওঠাপরার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি শ্যাম চরণ মুর্মূর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। স্বামী শ্যাম চরণ পেশায় ছিলেন একজন ব্যাঙ্কার। পরবর্তীতে এই দম্পতির দুটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত স্বামী সহ উভয় সন্তানই বর্তমানে জীবিত নেই। জেষ্ঠ পুত্র লক্ষ্মণ মুর্মু ২০০৯ সালে মারা যায় এবং ছোট ছেলে সিপ্পুন মুর্মু ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করে। পরের বছরই অর্থাৎ ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী শ্যামচরণ মুর্মুরও প্রাণবিয়োগ ঘটে। দুই ছেলে ছাড়াও তাদের একটি কন্যা সন্তান আছে।

দ্রৌপদী মুর্মু ও তাঁর  ব্যক্তিগত জীবন

করুণাময়ী রাণী রাসমণির জীবনী, Biography of Rani Rashmoni in bengali

কর্মজীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার বিবরণ, Draupadi Murmu and her career experience

ভারতের রাজ্য রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কিছু কাল পূর্বে দ্রৌপদী মুর্মূ একজন স্কুল শিক্ষিকা হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি ‘শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, রায়রঙ্গপুর’ নামক এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এছাড়াও রাষ্ট্রপতি মুর্মু ওড়িশা সরকারের অধীনস্থ সেচ বিভাগে জুনিয়র সহকারী হিসেবেও কাজ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ২০০২ সাল থেকে ওড়িশা রাজ্য সরকারের মৎস্য ও পশুপালন বিভাগে এমওএস হিসাবে নিযুক্ত হন এবং ২০০৪ সাল অবধি সেখানে কর্মরত ছিলেন।

কর্মজীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার বিবরণ

নবজাগরণের পথিকৃৎ রাজা রামমোহন রায়ের জীবনী, Biography of Raja Rammohan Roy in Bengali

রাজ্য রাজনীতিতে দ্রৌপদী মুর্মুর যোগদান, Draupadi Murmu’s Participation in state politics

দ্রৌপদী মুর্মু ১৯৯৭ সালে ভারতীয় জনতা পার্টিতে অর্থাৎ বিজেপি তে যোগদান করেছিলেন। এর কিছু সময় পর তিনি রায়রঙ্গপুর নগর পঞ্চায়েতের কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন। তিনি একজন মৃদুভাষী নেতা যিনি নিজের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ওড়িশার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি একসময় ভারতীয় জনতা পার্টি তফসিলি উপজাতি মোর্চার জাতীয় সহ-সভাপতি হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। ভারতের ওড়িশা রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি এবং বিজু জনতা দলের জোট সরকার গঠিত হয় ক্ষমতায় আসার পর, তিনি ৬ই মার্চ, ২০০০ সাল থেকে ৬ই আগস্ট, ২০০২ সাল পর্যন্ত বাণিজ্য ও পরিবহন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তীতে ৬ই আগস্ট, ২০০২ সাল থেকে ১৬ই মে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উন্নয়নের স্বাধীন দায়িত্বের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। দ্রৌপদী মুর্মু ওড়িশা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং ২০০৪ সালে রায়রঙ্গপুর বিধানসভা কেন্দ্রের একজন বিধায়ক হিসেবে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ২০০৭ সালে ওড়িশা বিধানসভার পক্ষ থেকে তিনি সেরা বিধায়ক হিসেবে নীলকণ্ঠ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।

রাজ্য রাজনীতিতে দ্রৌপদী মুর্মুর যোগদান

সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর জীবনী, Biography of Syed Mujtaba Ali in Bengali

ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত, Draupadi Murmu as the governor of Jharkhand

দ্রৌপদী মুর্মু ছিলেন ঝাড়খণ্ড রাজ্যের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল। তিনি ওড়িশা থেকে আসা প্রথম মহিলা আদিবাসী নেত্রী যিনি ভারতীয় কোনো রাজ্যের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।

২০২২ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিবরণ

২০২২ সালে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ছিল দেশের ১৫ তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন যা বর্তমান রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে আসার কারণে অনুষ্ঠিত হয়েছিল । উক্ত নির্বাচনটি ২০২২ সালের ১৮ জুলাই তারিখে ৯৮.৮৬% ভোটারের উপস্থিতির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছিল। দ্রৌপদী মুর্মু বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন এবং নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তিনি বিরোধী দলীয় প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে ২৯৬,৬২৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। এই নির্বাচন দ্রৌপদী মুর্মুকে ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতি তথা প্রথম আদিবাসী এবং দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি হিসাবে পদ গ্রহণে নেতৃত্ব দিয়েছিল। এর আগে প্রতিভা সিং পাটিল ভারতের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। দ্রৌপদী মুর্মু ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর জন্মগ্রহণকারী প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং এই শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হওয়া সর্বকনিষ্ঠ পদাধিকারী।

ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত

দ্রৌপদী মুর্মুর রাষ্ট্রপতিত্বে দেশ- বিদেশের জনগণের প্রতিক্রিয়া,
Reaction of the people of the country and abroad to the presidency of Draupadi Murmu

দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদ নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করার পর সারা বিশ্বব্যাপী অসংখ্য অভিনন্দন ও শুভেচ্ছাপূর্ণ বার্তা সামাজিক মাধ্যমের দ্বারা জ্ঞাপন করা হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন দ্রৌপদী মুর্মুকে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য  শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন এবং পুতিন আরও বলেন যে রাষ্ট্রপতি মুর্মুর নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশ অর্থাৎ রুশ-ভারত রাজনৈতিক সংলাপ এবং পরস্পরের ফলপ্রসূ সহযোগিতার ভবিষ্যতে আরও বিকাশ ঘটানোর আশা করেছেন। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনও অভিনন্দন জানিয়ে দ্রৌপদী মুর্মুর বিজয়কে ‘ভারতীয় গণতন্ত্রের শক্তি’ বলে অভিহিত করেছিলেন। অন্যদিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন এবং একই সাথে তিনি চীন ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে তাঁর সাথে কাজ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। উক্ত দেশগুলোর মত নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, বাংলাদেশ সহ অন্যান্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি তথা প্রধানমন্ত্রীরাও তাঁর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তাছাড়াও নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন সংখ্যালঘু উপজাতি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠি, বিশেষ করে সাঁওতাল সম্প্রদায় নব রাষ্ট্রপতি হিসাবে দ্রৌপদী মুর্মুর বিজয় উদযাপন করেছিলেন।

দ্রৌপদী মুর্মুর রাষ্ট্রপতিত্বে দেশ- বিদেশের জনগণের প্রতিক্রিয়া

উপসংহার, Conclusion

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু একজন সাঁওতাল নেত্রী হিসেবে তাঁর নিজ সম্প্রদায়ের জন্য তথা সাধারণ মহিলাদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হিসেবে নিজেকে জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন। একজন নেত্রী হিসেবে আদিবাসীদের সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে সর্বদাই তিনি সরব হয়েছেন। এবার ভারতের নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি পদাধিকারী হিসাবেও তিনি নিজের সকল দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু

FREQUENTLY ASKED QUESTIONS

দ্রৌপদী মুর্মু কে?

দ্রৌপদী মুর্মু হলেন একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি।

দ্রৌপদী মুর্মু কবে জন্মগ্রহণ করেন?

১৯৫৮ সালের ২০ জুন।

দ্রৌপদী মুর্মু ভারতের কততম রাষ্ট্রপতি?

১৫ তম

দ্রৌপদী মুর্মু কোন রাজ্যে প্রথম মহিলা রাজ্যপাল হিসেবে নির্বাচিত হন?

ঝাড়খন্ড

Recent Posts