“গণমাধ্যম মানে –তথ্য ভাণ্ডার ! তথ্য ভাণ্ডার মানে –জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষিত ও বিনোদিত করা ! “
ভূমিকা, Introduction
বর্তমান আধুনিক বিশ্ব সর্বক্ষেত্রেই গণমাধ্যমের দ্বারা প্রভাবিত। এই গণমাধ্যমের কল্যাণেই বিশ্ব আজ মানুষের হাতের মুঠোয় এসে গেছে। বিশ্বের যে কোনও জায়গার খবর এবং চিত্র কৃত্রিম উপগ্রহ মারফত আজ আমাদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম যেমন সংবাদপত্র, দূরদর্শন, বেতার, ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে যে কোনও বিষয়ে শিক্ষালাভ অতি সহজ এবং সুগম হয়েছে। বিশেষত আমাদের দেশের মতো উন্নতশীল দেশের গণজাগরণের ক্ষেত্রে উক্ত গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত। শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রেও গণমাধ্যম আজ দূরকে করেছে নিকট, জ্ঞান দিয়েছে কত অজানার, তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের নেতিবাচক দিকগুলো শিক্ষাবিস্তারের কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতাও ডেকে আনছে।
গণমাধ্যম বলতে কী বোঝায়? What does mass media mean?
গণমাধ্যম হল সেইসব মাধ্যম যার দ্বারা মানুষ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সংবাদ পেয়ে উপকৃত হতে পারে। বহু প্রাচীন সময় থেকেই লোকশিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিভিন্ন ধরনের মাধ্যম; যেমন কবিগান, কীর্তন, মঙ্গলগান, ব্রতকথা, ছড়া, লোকগাথা, কথকতা ও পুতুলনাচ ইত্যাদি। একসময় এগুলিই ছিল যুগপৎ লোকশিক্ষা তথা লোক-মনোরঞ্জনকারী প্রধান উপাদান। কালক্রমে বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে প্রচলন হয় সংবাদপত্র, চলচ্চিত্র, বেতার, দূরদর্শন, টেপরেকর্ডার এবং ইন্টারনেটের মত বিভিন্ন মাধ্যমের।
গণমাধ্যমের বিভিন্ন উপযোগিতা, Various uses of mass media
বর্তমানে ব্যবহৃত গণমাধ্যমগুলি মানুষকে যেমন একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দেয় এবং আনন্দ দান করে, তেমনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তা সহায়ক হয়ে ওঠে মানুষের শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রেও। এসব কারণেই খবরের কাগজ, টিভি, রেডিও ইত্যাদি আজকের সময়ে মানুষের কাছে আজ অন্যতম উপাদান। এই সবগুলি মানুষের শিক্ষাবিকাশে এবং জনসচেতনতা বিস্তারেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
গণমাধ্যম ও শিক্ষার সম্পর্ক, Relation between Media and education
গণমাধ্যমগুলি বর্তমান গণসামাজিক পরিস্থিতিতে পিছিয়ে পড়া সর্বাধিক জনসমষ্টির মধ্যে মনন-চিন্তাধারণা এবং বিশ্লেষণের বীজ বপন করার ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাবান। অক্ষর জ্ঞানহীন ব্যক্তিগণ বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করতে সক্ষম।
বিভিন্ন গণমাধ্যম অর্ধ-শিক্ষিত মানুষদের মনের মুক্তি ঘটায়। নিরক্ষর সাধারণ মানুষ গণমাধ্যমগুলির সাহায্যে দেশ- বিদেশের জনগণ এবং প্রকৃতির সাথে পরিচিত হয়, ভিন্ন ব্যক্তির বিচিত্র সব আচরণ সম্পর্কে জানতে পারে এবং ভিন্ন সব ভাষা শুনতে পায়।
এভাবেই মানুষের সংকীর্ণ মন মুক্তি পায় এবং বৃহত্তর বিশ্বের বিভিন্ন পেশার সাথে নিযুক্ত মানুষ গণমাধ্যমগুলির সাহায্যে বিভিন্নভাবে উপকৃতও হয়, গণমাধ্যমের দ্বারা প্রাপ্ত তথ্য তাদের পেশাগত শিক্ষারও সমৃদ্ধি ঘটায়; যেমন একজন চাষী গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান থেকে জানতে পারে উন্নত ধরনের বিভিন্ন সার ও বীজের সংবাদ, তাছাড়াও আবহাওয়া সম্পর্কে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্যও সে জেনে নিতে পারে।
তাছাড়াও নতুন সব যন্ত্রের ব্যবহারিক উৎকর্ষ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে। তাই বলা যায় যে সাধারণ মানুষকে পরোক্ষ শিক্ষাদানের কাজে গণমাধ্যমগুলোর অবদান উল্লেখযোগ্য।
ভারতীয় রেল নিয়ে বিস্তারিত তথ্য, Best details about Indian Railways in Bengali
প্রাথমিক শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা, Role of mass media in primary education
আমাদের দেশের গ্রামীণ জনপদের প্রাথমিক শিক্ষার নিশ্চিতকরণে গুণগত মানসম্পন্ন গণমাধ্যমগুলো তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। বস্তুত শিক্ষার প্রভাব মানব সমাজকে সভ্য করে, একটি পরিবারের সকলকে শিষ্টাচারে উদ্বুদ্ধ করে তুলে পাশাপাশি মানুষকে প্রজ্ঞাবান করে৷ যদি কোনো দেশের মানুষজন অশিক্ষিত হয়, তবে সেখানে বসবাসকারী পারিবারিক শিষ্টাচার এবং ব্যক্তিগত প্রজ্ঞার কোনােও মূল্যই থাকে না । এজন্যই প্রয়ােজন হয় গণশিক্ষার। তাছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার আধুনিকায়নের ক্ষেত্রেও গণমাধ্যম যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে।
অনলাইন টাকা রোজগার করার সেরা উপায়, Best ideas for earning money online in Bengali
গণমাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রের ভূমিকা, Role of Newspaper as Mass Media
জনগণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে সংবাদপত্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদপত্র বিভিন্ন সংবাদের পাশাপাশি নানা বিষয়ে প্রতিবেদন বা প্রবন্ধ নিবন্ধ ইত্যাদি সম্পর্কে লেখা প্রকাশ করে, এইসব লেখাগুলো সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বেশিরভাগ সংবাদপত্রে শুধুমাত্র ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বিভাগ ছাপানো হয়ে থাকে, তাছাড়া পাঠ্য বিষয় বহির্ভূত নানা বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞানের রাজ্যে সংবাদপত্র ছাত্রদেরকে আমন্ত্রণ জানায়, তাই বলা যায় যে শিক্ষাক্ষেত্রে সংবাদপত্রের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
শিক্ষা বিস্তারে রেডিও, Role of Radio in education
গণমাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রের পরই উল্লেখ করা যায় ‘রেডিও’-র কথা। আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণ স্বরূপ এই বেতারযন্ত্রটি আমাদের মধ্যে হাজির হয়ে বিভিন্ন ধরনের শ্রুতিনাটক, সংগীত, কৌতুক-নকশা প্রভৃতির মধ্য দিয়ে বিনোদনের ব্যবস্থা করেছে আমাদের জন্য। এই যন্ত্রের সাহায্যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্রচার করা যায় দেশ- বিদেশের সংবাদ।
এছাড়াও উক্ত মাধ্যমটি কৃষিসংবাদ, খেলাধুলার ঘটমান বিবরণ, কৃষিশিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান সংক্রান্ত কথা, বিজ্ঞান বিষয় সম্পর্কে নানা ধরনের বার্তা, আবহাওয়ার বিভিন্ন খবর, তাছাড়াও প্রাসঙ্গিক ইতিহাস এবং ভৌগোলিক বার্তাগুলো আমাদের নিকট পৌঁছে দেয়। বেশ কিছু কাল ধরে রেডিও জনসাধারণের কাছে কেবল বন্ধু নয়, পাশাপাশি একজন দক্ষ শিক্ষক হিসেবেও নিজের ভূমিকা পালন করে আসছে।
কম্পিউটার শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, What is the Importance of computer education in Bengali
শিক্ষা বিস্তারে দূরদর্শন বা টিভির ভূমিকা, Role of television in education
পৃথিবীর সর্বপ্রকার গণমাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী হল টেলিভিশন বা দূরদর্শন নামক মাধ্যমটি। রেডিওকে আমরা শুধু কান দিয়ে উপভোগ করছি। সেইদিকে টিভি আমাদের চক্ষু তথা কর্ণের বিবাদভঞ্জন করেছে। উক্ত মাধ্যমটি বিনোদনমূলক ছাড়াও নানা অনুষ্ঠান প্রচার করে। এমনকি শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানও পরিবেশিত হয় টিভিতে।
প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য উপযোগী তথা শিক্ষাবিস্তারে এবং সচেতনতা জাগিয়ে তোলার কাজে খুবই সহায়ক। অডিয়ো-ভিশুয়াল পদ্ধতি অর্থাৎ দেখার পাশাপাশি শোনাও যায় এমন অনুষ্ঠান প্রদর্শনের প্রভাবে সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়গুলি সম্বন্ধে শিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত এবং নিরক্ষর জনগন খুব সহজেই জ্ঞানলাভ করতে সক্ষম হন।
অপরাপর মাধ্যমের ভূমিকা, Role of other media
গণমাধ্যম হিসেবে সিনেমা, যাত্রাভিনয়, কথকতা, থিয়েটার ইত্যাদি বিষয়গুলিও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে এখনও নীতিশিক্ষার প্রধান মাধ্যম হিসেবে যাত্রা-কথকতা-পালাগানের প্রচলন রয়েছে। সাধারণ জনগন, বিশেষত গ্রামে বসবাসকারী অল্পশিক্ষিত বা নিরক্ষর লোকজনদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে শিক্ষাপ্রচারের ক্ষেত্রে আজও এইগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, Best ever detailed study about wordpress in Bengali
গণমাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেটের ভূমিকা, Role of internet as mass media
একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম আবিষ্কার হল ইন্টারনেট। এই ইন্টারনেট আবিষ্কারের প্রভাবে মানব জীবন হয়ে উঠেছে অনেকটা সহজ। শিক্ষা হোক কিংবা বাণিজ্য, দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের দিক থেকেও আমরা ইন্টারনেটের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছি।
ইন্টারনেট যেন পুরো বিশ্বকে এনে দিয়েছে আমাদের হাতের মুঠোয়, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে পূর্বের তুলনায় অনেকটা সুলভ ও সহজ করে তুলেছে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের দ্বারা দ্রুত সেবার পাওয়ার মাধ্যমে ইন্টারনেট বর্তমান যুগের সেরা গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শিক্ষায় গণমাধ্যমের সীমাবদ্ধতা, Limitations of mass media in education
বিশ্বে যত গণমাধ্যম রয়েছে, সেগুলোর অবদান কার্যকরী তখনই হয়, যখন তাদের পরিচালক মন্ডলী জনদরদী, সৎ তথা নিষ্ঠাবান হয়। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত বিষয়গুলি সাধারণ মানুষের মেজাজ, মন-মানসিকতা, পছন্দ- অপছন্দের দ্বারা যদি পরিচালিত না হয় তবে উদ্দেশ্য কখনই সঠিকভাবে সফল হতে পারবে না।
সমাজের জনসাধারণ মাধ্যমগুলোর সাথে অন্তরের সংযোগ অনুভব না করতে পারলে এরূপ শিক্ষা প্রয়োগের কোনো রকম কর্মসূচি গ্রহণ করা সম্ভব নয়। গণমাধ্যমগুলির ভাষা প্রয়োগের দিকেও কিছুটা নজর রাখা দরকার, সব কিছু মিলিয়েই গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা যেন সুদৃঢ় হয়।
- জীবন গঠন এবং চরিত্র সেরা রচনা, Best essay on Development of life and character in Bengali
- বাংলাদেশের যানজট সমস্যা, Traffic congestion problem of Bangladesh best article in Bengali
- ইভটিজিং সম্পর্কে বিস্তারিত, Best details about Eve teasing in Bengali
- সাইবার অপরাধ বা সাইবার ক্রাইম, Best write-up on Cyber crime in Bengali
- অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সেরা রচনা, Importance of perseverance best essay in Bengali
উপসংহার, Conclusion
বিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথাগত শিক্ষা এখনও অবধি সকল প্রকার মানুষের মধ্যে সঠিকভাবে বিস্তার লাভ করেনি। এখনও খুঁজলে দেখা যাবে হে ভারতের বহু মানুষ নিরক্ষর। তাদেরকে শিক্ষাদান, জীবনোপযোগী নানা রকম সংবাদ পরিবেশন, জ্ঞান প্রদান, কৃষি-বাণিজ্য-শিল্প ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞাতব্য সকল তথ্যাদি পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলিই হল অপরিহার্য মাধ্যম।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বহির্ভূত এই সব মাধ্যমগুলি ভিন্ন স্তরের জনগণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম। দৈনন্দিন জীবনের জন্য উপযোগী শিক্ষাদান করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলি প্রকৃত রূপেই এক-একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমতুল্য ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। এইজন্য গণমাধ্যমগুলিকে আরও বেশি দক্ষ ও নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে।