সিটি স্ক্যান কি , What is CT scan
সিটি স্ক্যান বা কম্পিউটেড টমোগ্রাফি স্ক্যান যাকে আমরা সংক্ষেপে সিটি স্ক্যান বলে থাকি হল এক প্রকার এক্স-রে কিন্তু এক্স-রে এর মত এ ক্ষেত্রে একটি ছবি নেয়া হয় না। এক্স-রে টিউবের আবর্তনের মধ্যে দিয়ে অসংখ্য ছবি নেয়া হয় এই পরীক্ষাটিতে । ছবি নেওয়ার পরে সেগুলিকে কম্পিউটারে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে একত্রিত করা হয়ে থাকে।
সিটিস্ক্যান করার কারণ, Reasons to do CityScan
সিটি স্ক্যান করার মধ্যে দিয়ে শরীরের ভেতর নিখুঁত ছবি পাওয়া যায় যার ফলে শরীরের বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করা খুব ই সহজতর হয়। যে যে ক্ষেত্র বিশেষে সিটি স্ক্যান করা হয়ে থাকে সেগুলি হল :
**ক্যান্সার বা টিউমার নির্ধারণ করতে , মস্তিষ্কের রোগ বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ সম্পর্কে অবগত হতে
** হৃদযন্ত্রের কোন রোগ আছে কি না অথবা রক্ত প্রবাহে কোন বাধা রয়েছে কিনা ;সে ব্যাপারে জানতে
** ফুসফুসের রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে
** হাড় ভাঙ্গা বা অন্যান্য কোন সমস্যা নির্ণয়ের প্রয়োজনে
** কিডনী বা মূত্রসংবহন তন্ত্রের কোন সংক্রমণ বা পাথর সনাক্ত করার ক্ষেত্রে
**পিত্তথলি, লিভার বা অগ্নাশয়ের রোগ নির্ধারণ করতে
** বায়োপসি করার ক্ষেত্রে অনেক সময় সিটি স্ক্যানের সাহায্য নেয়া হয়ে থাকে।
**ক্যান্সার রোগীর রোগের কতটা বিস্তৃতি হয়েছে সে সম্পর্কে জানতে সিটি স্ক্যান করা হয়ে থাকে।
**এছাড়া যেসব রোগীকে পেস মেকার, ভাল্ভ বা এ ধরনের যন্ত্র শারীরিক প্রয়োজনেই দেওয়া হয়ে থাকে তাদেরকে সিটি স্ক্যান করতে হয় যেহেতু তাদের এমআরআই করা সম্ভব নয় ।
সিটিস্ক্যান করার প্রক্রিয়া, CityScan process
সিটি স্ক্যান প্রকৃতপক্ষে একটি ব্যাথামুক্ত পরীক্ষা। রোগীকে সিটি স্ক্যান টেবিলে রোগীকে শুইয়ে টেবিলটি বৃত্তাকার একটি স্ক্যানারের মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে আর সেখানে এক্স-রে টিউব ও সেন্সর দুটি যন্ত্রই উপস্থিত থাকে । উক্ত টিউব ও সেন্সর খুব দ্রুত গতিতে ঘুরতে থাকে, তবে এটি বাইরে থেকে দৃশ্যমান নয় । এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার এবং ভালো ছবি পাওয়ার জন্য কন্ট্রাস্ট মেটেরিয়ালের প্রয়োজন হতে পারে আর সেটি একটা ইনজেকশন হিসেবে শিরায় দেওয়া হয়ে থাকে আবার অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে পান করতেও দেয়া হতে পারে।এই প্রক্রিয়া চলাকালীন রোগীকে নড়াচড়া করতে নিষেধ করা হয়। রোগীর সাথে যোগাযোগ রাখা হয়ে থাকে বাইরে থাকে ইন্টারকমের মাধ্যমে। একটি স্বচ্ছ জানালার সাহায্যে রোগীর উপর যত্নসহকারে নজর রাখা হয়ে থাকে।
সিটি স্ক্যানের সময় কি ধরনের প্রস্তুতির প্রয়োজন, What kind of preparation is required during CT scan?
* সিটি স্ক্যান করার সময় কন্ট্রাস্ট ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করার হয়। অতএব রোগীর যদি এলার্জি থাকে তাহলে সেটা পূর্বেই জানিয়ে দেওয়া উচিত।
*টেস্টের ২৪ ঘন্টা আগে থেকে “কার্বোহহাইড্রেট” জাতীয় খাবার কমিয়ে দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
*টেস্টের ৬ ঘন্টা আগে থেকে চা,এলকোহল পান করতে নিষেধ করা হয়ে থাকে।
*টেস্ট করার ৩০ মিনিট আগে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রে অবশ্যই পৌছাতে হবে।
·** অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা কিছুটা বিপজ্জনক হতে পারে তাই গর্ভাবস্থায় সিটি স্ক্যান করার আগে সে বিষয়ে চিকিৎসককে অবহিত করা উচিত।
* সদ্য প্রসবকারী মায়েরা সিটি স্ক্যান করার ২৪ ঘন্টা পর বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন কারণ টেস্টের সময় শরীরে বিশেষ ধরনের কিছু রেডিয়েশন ডুকে যায় যা দুধের মাধ্যমে বাচ্চার শরীরে পৌঁছে যেতে পারে এবং যা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর।
* অনেক সময় রোগী পেটের সিটিস্ক্যান করাতে যান , সে ক্ষেত্রে খালি পেটে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে পূর্বেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে অবহিত করা উচিত।
* রোগীর শরীরে যদি ধাতব গয়না, হিয়ারিং এইড বা এ জাতীয় বস্তু থাকে তবে তা সিটি স্ক্যানে বাধা দেয়। এ ব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
* সিটি স্ক্যান করার আগে রোগী কে তাঁর পরিধেয় বস্ত্রটি খুলে বিশেষ গাউন পরে স্ক্যান করার প্রয়োজন হতে পারে।
* পূর্বেই বলা হয়েছে যে সিটি স্ক্যান চলাকালীন নড়াচড়া করা যায় না। তাই কোনো রোগী ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লে তাকে সিডেটিভ জাতীয় ওষুধ বা শিশুদের ক্ষেত্রে ঘুমের ওষুধের প্রয়োগ করা হতে পারে।
জিনতত্ত্ববিদ মাকসুদুল আলমের জীবনী, Biography of Bangladeshi scientist Maqsudul Alam in Bengali
কন্ট্রাস্ট, Contrast
সিটি স্ক্যানে মানুষের শরীরের হাড় খুব সহজেই দৃশ্যমান হয়ে থাকে কিন্তু সফট টিস্যু যেমন রক্তনালী, বা বিশেষ কিছু অর্গান খুব সহজে দেখা যায় না। সফট টিস্যু গুলি সুস্পষ্ট ভাবে দেখতে পাওয়ার জন্য কন্ট্রাস্ট বা স্পেশাল ডাই ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেগুলি ৩ ভাবে রোগীকে দেয়া হয়:
১) রক্তনালীর মাধ্যমে
২) মুখে খাওয়ানো
৩) এনিমা যা পায়ুপথে দেওয়া হয়ে থাকে।
সর্তকতা, Alertness
যদি রোগী কোনো বিশেষ ধরনের ওষুধ গ্রহণ করেন তবে ডাক্তারকে জানানো বাধ্যতামূলক ; বিশেষ করে ডায়াবেটিস জাতীয় ঔষধ “মেটফোরমিন”।
# রোগী অন্তঃসত্ত্বা অথবা বা গর্ভসঞ্চারের সম্ভাবনা থাকলে ,ডাক্তারকে জানাতে হবে।
# রোগীর এলার্জি জাতীয় সমস্যা থাকলব,চিকিৎসককে অবহিত করতে হবে
শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আল-মুতীর জীবনী, Biography of Abdullah-Al-Muti in Bengali
MRI কি ? What is MRI ?
এমআরআই এর পূর্ণাঙ্গ অর্থ হল Magnetic Resonance Imaging।এটি সবথেকে অত্যাধুনিক রোগ নির্ণয়কারী এক ধরনের পরীক্ষা, যার মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের একটি সুস্পষ্ট ছবি নেওয়া হয়ে থাকে । এমআরআই.এর ফলে নির্দিষ্ট রোগ বা অস্বাভাবিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং সন্ধান করে বের করা সম্ভব হয় । চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি রেডিওলজি বিভাগের অন্তর্গত। এই পরীক্ষাটি বিংশ শতাব্দীর চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যা অগণিত মানুষের জীবন বাঁচিয়ে চলেছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমআরআই শাখা -টি বৃহৎ রেডিওলজি বিভাগের অন্তর্গত হলেও এর পুরো বিষয়টি এতটাই বিস্তৃত যে বিশ্বের গবেষকরা এটিকে একটি সতন্ত্র বিষয় বা বিভাগ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। রেডিওলজি বিভাগের অন্যান্য পরীক্ষা যেমন, এক্স রে বা সিটি স্ক্যান এর মত এমআরআই পরীক্ষাতে মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকারক কোন বিকিরণ ব্যবহূত হয় না যাকে বলা হয় আয়োনাইজিং রেডিয়েশন।
বিশ্ববন্দিত কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত’র জীবনী, Biography of Michael Madhusudan Dutta in Bengali
এমআরআই এর গোড়াপত্তন, The origins of MRI
এমআরআই হল একটি নতুন প্রযুক্তি যার ভিত্তিপ্রস্তর গঠিত হয়েছিল ১৯৪৬ সালে। সেই বছরেই সুইজারল্যান্ডের পদার্থবিদ, Felix Bloch এবং আমেরিকান পদার্থবিদ Edward Mills Purcell স্বাধীনভাবে ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ফেনোমেনা আবিষ্কার করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে এই কাজের জন্য ১৯৫২ সালে পদার্থ বিদ্যায় এই দুই মহান পদার্থবিদ একত্রে নোবেল পুরস্কার অর্জন করে থাকেন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এমআরআই একটি রাসায়নিক ও ভৌত বিশ্লেষণ এর যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকত , যা নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স বা NMR নামে পরিচিত ছিল। আমেরিকান রসায়নবিদ Paul Christian Lauterbur ১৯৭৩ সালে প্রথম NMR ইমেজ প্রস্তুত করেন , যেটি ছিল টেস্ট টিউব এর চিত্র।
আমেরিকান চিকিৎসক , Dr. Raymond Johnson Damadian ছিলেন প্রথম MRI স্ক্যানিং মেশিনের উদ্ভাবক। মানবদেহের স্ক্যান করার করার উদ্দেশ্যে NMR-কে নিরাপদে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে Damadian এর ভূমিকা চিরস্মরণীয় । বর্তমানকালের বহুল ব্যবহৃত এই এমআরআই পদ্ধতি তিনিই উদ্ভাবন করেন। ক্যান্সার নির্ণয় করার উদ্দেশ্য নিয়ে Dr. Damadian ১৯৭৭ সালের ৩রা জুলাই এক সম্পূর্ণ মানব দেহের প্রথম স্ক্যানটি সম্পাদন করেছিলেন এবং সেটি সম্পন্ন করতে তাঁর প্রায় পাঁচ ঘন্টা সময় লেগেছিল। ১৯৭৭ সালে ব্রিটিশ পদার্থবিদ Sir Peter Mansfield এর দ্বারা আবিষ্কৃত ইকো প্ল্যানেট টেকনিক যা অতি দ্রুত এমআরআই স্ক্যানিং করতে পারে সেটি আবিস্কারের পরবর্তী ২০ বছরের বেশি সময় ধরে অনেক বিজ্ঞানী এই MRI-এর খুব দ্রুত উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হন ।
সাবীর্য় আমেরিকান পদার্থবিদ, Nikola Tesla ১৮৮২ সালে হাঙ্গেরীর বুদাপেস্টে “আবর্তিত / ঘুরনায়ামান চৌম্বক ক্ষেত্র” আবিস্কার করেন। চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি যত অধিকে মাত্রায় হবে, মানবদেহের পরমাণু থেকে নির্গত রেডিও সিগন্যালস -এর পরিমাণও তত বেশি শক্তিশালী হবে, যার ফলে এমআরআই চিত্রের মানও তত বেশি পরিস্কার হবে।
এমআরআই স্ক্যানার, MRI scanner
বিভিন্ন ধরনের এমআরআই স্ক্যানার আছে, যেমন, Low-Field বা অল্প ক্ষমতা সম্পন্ন এমআরআই স্ক্যানার ; High-Field বা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন MRI scanner এবং অত্যাধিক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন MRI scanner আছে, তবে সেগুলি শুধুই গবেষণার কাজে ব্যবরিত হয়, কারণ এত বেশি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পদ্ধতি মানব শরীরের জন্য নিরাপদ বলে এখনো চিহ্নিত হয়নি।
Supercon MRI scanner-যার কথা আজকাল আমরা প্রায়ই শুনে থাকি সেটি হল এমআরআই মেশিনে ব্যবহৃত এক অতিপরিবাহী চুম্বক যার ফলে সেটি অনেক বেশী চৌম্বক ক্ষেত্র তীব্রতায় পৌঁছাতে পারে।
মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি সৈয়দ আলাওল, Syed Alaol Biography in Bengali
এমআরআই মেশিন কিভাবে কাজ করে? How do MRI machines work?
এমআরআই স্ক্যানার মানব শরীরের ছবি নেওয়ার জন্য একটি অত্যন্ত শক্তিশালী চুম্বক , রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি তরঙ্গ যা একটি শক্তিশালী কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকে।
এমআরআই পরীক্ষা করার কারণ, Reasons for an MRI scan
শরীরের বিভিন্ন অংশের সূক্ষাতিসূক্ষ রোগ নির্ণয় করার জন্য বর্তমানে এমআরআই অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ও পছন্দের পদ্ধতিতে হিসেবে পরিণত হয়েছে। মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড, জয়েন্ট যেমন, হাঁটু, কাঁধ, কব্জি, এবং গোড়ালি, পেট, স্তন, রক্তনালী, হার্ট এবং শরীরের অন্যান্য অংশের পরীক্ষার জন্য এমআরআই সবথেকে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে চিহ্নিত।
এমআরআই পরীক্ষার মাধ্যমে নিম্নলিখিত রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে :
** মস্তিষ্কের রোগ যেমন টিউমার, স্ট্রোক ও অন্যান্য।
** মেরুদণ্ডের রোগ বা আঘাত।
** জোড়া রোগ এবং ক্রীড়াজনিত আঘাত।
** হাড় এবং মাংসপেশির রোগজনিত সমস্যা।
** রক্তনালীর অস্বাভাবিকতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে,
** মহিলাদের স্তন ও তল পেট জনিত সমস্যা।
** প্রস্টেটের সমস্যা।
** লিভার, পিত্ত নালী ও আন্ত্রিক জনিত সংক্রমণ ।
** নির্দিষ্ট নাক, কান ও গলা অর্থাৎ ইএনটি সম্পর্কিত কোনো রোগ, ইত্যাদি।
এমআরআই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি, Preparation for MRI examination
*এমআরআই পরীক্ষার বিশেষ কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই পরীক্ষার জন্য রোগীর ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা থাকে না। রোগী স্বাভাবিক ভাবে খাদ্যগ্রহণ , জল পান করতে বা কোনো নির্দিষ্ট ঔষধ চালিয়ে যেতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজনীয় যে এমআরআই সিস্টেমের শক্তিশালী চুম্বক দ্বারা আকৃষ্ট না হওয়ার জন্য, রোগীকে খেয়াল রাখতে হবে যেন তিনি কোন প্রকার ধাতব বস্তু নিয়ে এমআরআই কক্ষে প্রবেশ না করেন।
* এমআরআই স্ক্যান করার জন্য একজন সদস্য কিছু নিরাপত্তা প্রশ্নাবলী করবেন রোগীকে আর সেই অনুযায়ী একটি স্ক্রীনিং ফর্ম পূরণ করতে বলা হবে।
*এমআরআই পরীক্ষা করার আগে রোগীকে যে সকল ধাতব বস্তু খুলে রাখতে হয় বা অপসারণ করতে হয় সেগুলি হল : পার্স, মানিব্যাগ, ব্যাংক কার্ড, ঘড়ি, চশমা, কলম, ক্লিপ, কয়েন, চাবি, জুতা, বেল্ট বাকেলস, সেফটি পিন, চুলের পিন, মেটাল গহনা, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস , সেল ফোন, শ্রবণ যন্ত্র ,ধাতব প্লেট সংযুক্ত আলগা দাঁত, মেটাল চেইন, বোতাম, হুক ইত্যাদি ।
এমআরআই পরীক্ষা করতে কারা অক্ষম, Who is unable to undergo MRI examination?
যে সকল রোগীর শরীরের ভিতরে ইলেক্ট্রনিক অথবা চৌম্বকীয় ধাতব যেমন ম্যাগনেটিক মেটালস ;উদাহরণ স্বরূপ ~লোহা, নিকেল, কোবাল্ট এ ধরনের বস্তু স্থাপন করা আছে তাদের এমআরআই স্ক্যান করা চলবে না;
কারণ স্বরূপ বলা হয়ে থাকে যে এর ফলে মেডিকেল ডিভাইসটি তার স্থান পরিবর্তন করে ফেলতে পারে বা অস্বাভাবিক উত্তপ্ত হতে পারে এবং ছবির মান আশানুরূপ না ও হতে পারে। এ ছাড়াও মানবশরীরের স্থাপিত মেডিকেল ডিভাইসগুলি যা এমআরআই পরীক্ষা করার সময় স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বা অন্যান্য সমস্যা তৈরি করতে পারে সেগুলি হল :
# পেসমেকার
#Aneurysm ক্লিপ
# Cochlear বা কান ইমপ্লান্ট
#শরীরের আথবা চোখের ভিতর যদি কোন চৌম্বক ধাতব বস্তু উপস্থিত থাকে যেমন বুলেট, ধাতুর টুকরা ইত্যাদি।
এসব বিশেষ ক্ষেত্রে এমআরআই স্ক্যান করার আগে বিশেষজ্ঞ বা রেডিওলজিস্ট এর সাথে আলোচনা করা অবশ্যকর্তব্য।
নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ: ডা. নাসিমা আক্তারের জীবনী, Biography of Dr. Nasima Akter in Bengali
কিভাবে এমআরআই পরীক্ষা করা হয়? How is the MRI test performed?
প্রায় ১.৫ মিটার দীর্ঘ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এমআরআই স্ক্যানার প্রায় একটি সুড়ঙ্গের মত, যা একটি বড় গোলাকার চুম্বক দ্বারা বেষ্টিত থাকে। রোগীকে একটি পালঙ্কের উপরে শুইয়ে দেয়া হয়ে থাকে এবং পরবর্তীকালে যেটি স্ক্যানারের মধ্যে ঢুকে যায়। মানব শরীরের যে অংশটি পরীক্ষা সাপেক্ষ তাতে একটি রিফিলিং ডিভাইস সংযুক্ত করা হয়, যা সেই অংশের চারিপাশে বা পিছনে স্থাপন করা হয়। এই রিসিভিং ডিভাইস রোগীর শরীর থেকে নির্গত ক্ষুদ্র রেডিও সংকেত সনাক্ত করতে সক্ষম । এই বিশেষ ধরনের সংকেতগুলি খুব তাড়াতাড়ি স্থানীয় চৌম্বকীয় ক্ষেত্র পরিবর্তন করে ও বিশেষ কম্পিউটার প্রক্রিয়ার সাহায্যে শরীরের যে অংশের পরীক্ষা হয় সেই অংশের ছবি উৎপাদন করতে সক্ষম হয় ।
সিটি স্ক্যানের মতোই এই পরীক্ষাটি ও যন্ত্রণাহীন। স্ক্যানার কাজ করবার সময় কিছুই অযাচিত আওয়াজ উৎপাদন হতে পারে এবং তার ফলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে রোগীর কানে হেডফোন লাগিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। ১০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে এই পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয়ে যায় তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এক ঘন্টা বা তার বেশি সময় লাগতে পারে।
পরীক্ষা চলাকালীন রোগীকে পরামর্শ দেয়া হয় নিজের দেহকে সম্পূর্ণ শিথিল করে রাখা কারণ পরীক্ষা চলাকালীন কোন রকম নড়াচড়া করলে ছবি ঝাপসা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তবে কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ঔষধের মাধ্যমে হালকা ঘুম পাড়িয়ে দেয়ার জন্য শিরাতে একটি ইঞ্জেকশন বা সিডেটিভ দেওয়া হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট দ্বারা সম্পন্ন করা হয়।
এমআরআই পরীক্ষা চলাকালীন স্ক্যানার অপারেটর মনিটরে সব সময়ে রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন । পরীক্ষা চলাকালীন রোগী যদি অস্বাভাবিক কিছু যদি মনে করেন তবে অপারেটরের সাথে রোগী যোগাযোগ করতে পারবেন।
সিটিস্ক্যান অপেক্ষা এমআরআই এর সুবিধা গুলি, Advantages of MRI over CTscan
এক্সরে বা সিটি পরীক্ষায় যে এজেন্ট গুলি ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেই তুলনায় এমআরআই এজেন্টে আয়োডিন থাকে না, অতএব এতে রোগীর খুব কম সম্ভাবনা থাকে শারীরিক এলার্জী বা অন্যান্য সমস্যা হওয়ার । স্ক্যান করার পরে রোগীর কোন সীমাবদ্ধতা থাকে না এবং তিনি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে সক্ষম।
এমআরআই পরীক্ষাটি সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যাবার পরে একজন এমআরআই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তা দেখেন এবং এই ছবিগুলি স্ক্যান এবং ব্যাখ্যা করে একটি রিপোর্ট লেখেন । পরবর্তী সময়ে সেই রিপোর্ট অনুযায়ী রোগীকে তাঁর ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং প্রয়োজনে পড়লে রেডিওলজিস্টের এর সাথেও কথা বলা যেতে পারে।
এমআরআই পরীক্ষা কতটা নিরাপদ, How safe is the MRI test?
এমআরআই পরীক্ষা অত্যন্ত নিরাপদ একটি পরীক্ষা। এই পদ্ধতি কোন ব্যথা উৎপাদন এবং কোনো ধরনের স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী টিস্যুর ক্ষতিসাধন করে না। তবে গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাস, এবং রোগীর যদি বিগত ৮ সপ্তাহের মধ্যে মস্তিষ্ক, কান, চোখ, হৃদয়, বা রক্তনালীর অপারেশন হয়ে থাকে, তবে এমআরআই পরীক্ষা সাময়িক কালের জন্য রোগীকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
এটা সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, এই পরীক্ষাটিতে কোন ক্ষতিকারক রেডিয়েশন থাকে না এবং এই পরীক্ষায় ব্যবহৃত কনট্রাস্ট এজেন্ট তুলনামুলক ভাবে সমস্যার সৃষ্টি করে না।
- গুরু রবিদাস এর জন্ম জয়ন্তী শুভেচ্ছা বার্তা, গুরু রবিদাসের বাণী, Guru Ravidas Jayanti wishes in Bangla
- গুপ্তমুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি, Best details on Cryptocurrency in Bengali
- টমাস আলভা এডিসন এর জীবনী, Best Biography of Thomas Alva Edison in Bengali
- জীবন গঠন এবং চরিত্র সেরা রচনা, Best essay on Development of life and character in Bengali
- বাংলাদেশের যানজট সমস্যা, Traffic congestion problem of Bangladesh best article in Bengali
পরিশিষ্ট, Conclusion
সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই পরীক্ষা সম্পর্কিত এই তথ্যাবলী সাধারণ মানুষের মধ্যে উপরোক্ত পরীক্ষাগুলির সম্পর্কে সম্বন্ধে প্রাথমিক জ্ঞান প্রদান করবে আশা করা যায়। পরিশেষে এ কথাই বলা যুক্তিসংগত হবে যে নিজের পরীক্ষা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্যের জন্য রেডিওলজিস্ট , আপনার চিকিৎসক বা রেডিওগ্রাফার এর উপর ভরসা করে তবেই নিশ্চিন্তভাবে এগিয়ে চলা উচিত।