আব্দুল জব্বার ছিলেন একজন স্বনামধন্য বাংলাদেশি সঙ্গীত শিল্পী। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র দ্বারা প্রচারিত ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ সহ অনেক উদ্বুদ্ধকরণ গানের গায়ক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। উক্ত গান সহ তাঁর গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’,। এই তিনটি গান ২০০৬ সালে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান করেছিল।
জন্মকাল, Birth year
সঙ্গীতশিল্পী আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলায় জন্ম হয় তাঁর।
জয়া আহসানের জীবনকাহিনি | Biography of Jaya Ahsan in Bengali
আব্দুল জব্বারের শিক্ষাজীবন, Education Life of Abdul Jabbar
আব্দুল জব্বার কুষ্টিয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি প্রথমে কুষ্টিয়ায় ওস্তাদ মুহম্মদ ওসমান গনির নিকটে সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে কলকাতায় মোকসেদ আলী শাই, ওস্তাদ লুৎফেল হক ও শিবকুমার চ্যাটার্জির কাছে গানের তালিম গ্রহণ করেন।
কর্মজীবন, Career
সঙ্গীতশিল্পী জব্বার ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে তালিকাভুক্ত হন। পরে ১৯৬২ সালে তিনি প্রথমবারের জন্য এক চলচ্চিত্রে গান রেকর্ড করেছিলেন। ১৯৬৪ সাল থেকে আব্দুল বিটিভির নিয়মিত গায়ক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হান দ্বারা পরিচালিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম রঙ্গিন চলচ্চিত্র ‘সংগম’- এর গানে কণ্ঠ দেন তিনি। ১৯৬৮ সালে ‘এতটুকু আশা’ নামক ছবিতে সত্য সাহার সুরে তাঁর গাওয়া “তুমি কি দেখেছ কভু” গানটি প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। একই বছর “ঢেউয়ের পর ঢেউ” ছবিতে রাজা হোসেন খানের সুরে “সুচরিতা যেওনাকো আর কিছুক্ষণ থাকো” গানে কণ্ঠ দেন আব্দুল। অতঃপর রবীন ঘোষের সুরে তিনি ‘পীচ ঢালা পথ’ (১৯৭০) ছবিতে “পীচ ঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি” এবং ‘নাচের পুতুল’ (১৯৭১) ছবির শীর্ষক নিয়ে রচিত গান “নাচের পুতুল”-এ কণ্ঠ দেন তিনি।
জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জীবন কাহিনী – Story of Mahatma Gandhi’s Life in Bengali
পরবর্তীকালে ১৯৭৮ সালে ‘সারেং বৌ’ চলচ্চিত্রে আলম খানের সুরে রচিত “ও..রে নীল দরিয়া” গানটি দর্শকদের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয় হয়।
যেসব চলচ্চিত্রের জন্য গান গেয়েছেন সেগুলি হল:
● সংগম (১৯৬৪)
● নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৭)
● উলঝন (১৯৬৭)
● এতটুকু আশা (১৯৬৮)
● ঢেউয়ের পর ঢেউ (১৯৬৮)
● ভানুমতি (১৯৬৯)
● ক খ গ ঘ ঙ (১৯৭০)
● পীচ ঢালা পথ (১৯৭০)
● দীপ নেভে নাই (১৯৭০)
● বিনিময় (১৯৭০)
● জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০)
● নাচের পুতুল (১৯৭১)
● মানুষের মন (১৯৭২)
● স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা (১৯৭৩)
● ঝড়ের পাখি (১৯৭৩)
● আলোর মিছিল (১৯৭৪)
● সূর্যগ্রহণ (১৯৭৬)
● তুফান (১৯৭৮)
● অঙ্গার (১৯৭৮)
● সারেং বৌ (১৯৭৮)
● সখী তুমি কার (১৯৮০)
● কলমিলতা (১৯৮১)
আব্দুল জব্বারের ব্যক্তিগত জীবন, Personal Life of Abdul Jabbar
ব্যক্তিগত জীবনে আব্দুল তিনবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। সঙ্গীতশিল্পী আব্দুল জব্বারের প্রথম স্ত্রী ছিলেন গীতিকার শাহীন জব্বার। স্ত্রীর গানেও কণ্ঠ দিয়েছিলেন আব্দুল জব্বার। সঙ্গিতজগতের সাথে জড়িত এই দম্পতির সন্তান মিথুন জব্বারও একজন সঙ্গীতশিল্পী। জব্বারের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম রোকেয়া জব্বার মিতা।
তিনি ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন এবং সেই কারণবশত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন; কিন্তু অবশেষে ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩ সালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন রোকেয়া। জব্বারের তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন হালিমা জব্বার, যিনি পেশায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন গীতিকার তথা কথাসাহিত্যিক, এছাড়াও বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত ১ম শ্রেণীর গীতিকার ও মুক্তিযােদ্ধা হিসেবেও খ্যাত।
বাংলাদেশী উপাচার্য অধ্যাপক ড. অমিত চাকমা, Biography of Dr. Amit Chakma in bengali
প্রথম একক অ্যালবাম, First single Album
২০১৭ সালে সুখ্যাত বাঙালি সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল জব্বারের প্রথম মৌলিক গানের অ্যালবাম “কোথায় আমার নীল দরিয়া” মুক্তি পায়। অ্যালবামটির গীতিকার ছিলেন মোঃ আমিরুল ইসলাম এবং সুর দিয়েছেন গোলাম সারোয়ার। প্রথমে অ্যালবামটির নামকরণ করা হয়েছিল ‘মা আমার মসজিদ মা আমার মন্দির’। পরবর্তী সময়ে শিল্পী আব্দুল জব্বারের বহুকাল পূর্বে গাওয়া ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানের সাথে মিল রেখে অ্যালবামের নাম দেওয়া হয় “কোথায় আমার নীল দরিয়া”।
“কোথায় আমার নীল দরিয়া” অ্যালবামের প্রেক্ষাপট
“কোথায় আমার নীল দরিয়া” অ্যালবাম নিয়ে কাজ শুরু করা হয় ২০০৮ সালে। অ্যালবামের “এখানে আমার পদ্মা মেঘনা” গানটি শিল্পী আব্দুল জব্বারের কণ্ঠে রেকর্ড হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার করার জন্যে। পরে তিনি উক্ত গানের গীতিকার আমিরুল ইসলামের নিকট একটি অ্যালবাম করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
গীতিকার অ্যালবামের জন্য আরও কিছু গান রচনা করেন এবং সুরকার গোলাম সারোয়ার তাতে সুর দেন। ২০০৯ সালে অ্যালবামের কাজ শেষ হয়ে যায়, কিন্তু নানা জটিলতার কারণে উক্ত অ্যালবামটি মুক্তি পায় ২০১৭ সালে। ‘কোথায় আমার নীল দরিয়া’ বাংলা গানের কিংবদন্তি ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গীত শিল্পী মোঃ আব্দুল জব্বারের প্রথম একক অ্যালবাম ৯টি মৌলিক গান দিয়ে সাজানো হয়েছিল। এই অ্যালবামে প্রায় সবধরনের আবেগের গান রয়েছে।
আব্দুল ২০১৭ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গানের এক অ্যালবামের কাজ শুরু করেন। গীতিকার আমিরুল ইসলাম দ্বারা রচিত “বঙ্গবন্ধু দেখেছি তোমায় দেখেছি মুক্তিযুদ্ধ ” শিরোনামের গানটিতে কণ্ঠ দেওয়ার পূর্বেই তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন, ফলে সেই অ্যালবামের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আবদুলের অবদান, Abdul’s contribution to the war of independence of Bangladesh
১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়, তখন আব্দুল বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়ানোর লক্ষ্যে এবং তাঁদের প্রেরণা যোগানোর জন্য স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বেশ কিছু গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন। সেসময় তাঁর গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া যুুদ্ধের সময়কালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি করার জন্য প্রখ্যাত ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে আব্দুল মুম্বাইয়ের বিভিন্ন স্থানে কাজ করেন। তৎকালীন সময়ে কোলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পগুলোতে ঘুরে ঘুরে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গণসঙ্গীত পরিবেশন করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা যুগিয়েছেন তিনি। সেসময় বিভিন্ন স্থানে গণসঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত ১২ লাখ রুপি তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করেছিলেন।
বেস্ট বাংলা ক্যাপশন ও বায়ো কালেকশান ~ 275+ Top Bengali Captions & Bio for Facebook, Instagram
পুরস্কার ও সম্মাননা, Awards and Honour
বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কার অর্জন করেন আব্দুল জব্বার।
● বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক (১৯৭৩)
● একুশে পদক (১৯৮০)
● স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৬)
● বাচসাস পুরস্কার (২০০৩)
● সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস – আজীবন সম্মাননা (২০১১)
● জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার
আব্দুল জব্বারের জীবনাবসান, Death of Abdul Jabbar
আব্দুল জব্বার ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে কিডনি, হার্ট এবং প্রস্টেট সহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু সময়ের জন্য চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে তাঁকে ১ আগস্ট নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় এক মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শেষপর্যন্ত ৩০ আগস্ট উক্ত হাসপাতালের আই সি ইউ তে মৃত্যুবরণ করেন এই স্বনামধন্য সঙ্গীতশল্পী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৭৮ বছর।
উপসংহার, Conclusion
বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বার অনেক কম সময়ের মধ্যেই সঙ্গীত জগতে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলেন। বাংলার জনগণকে দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গানের উপহার। আব্দুল বাংলা গানের আকাশে মহাতারকার মত জ্বলবেন অনন্তকাল ধরে এবং তাঁর গানগুলো অনুপ্রেরিত করবে নতুন প্রজন্মের গায়কদের।
- ওপেনহেইমার এর জীবনী ও বিখ্যাত উক্তি সমূহ, Best Biography and quotes of Robert J Oppenheimer in Bengali
- ওয়াল্ট ডিজনির জীবনী, The Best Biography of Walt Disney in Bengali
- আবদুর রহমান, এক কিংবদন্তি অভিনেতা, The best biography of Abdur Rahman in Bengali
- মৃণাল সেনের জীবনী, Best Biography of Mrinal Sen in Bengali
- টমাস আলভা এডিসন এর জীবনী, Best Biography of Thomas Alva Edison in Bengali
Frequently asked questions
আব্দুল জব্বার কে ছিলেন?
একজন স্বনামধন্য বাংলাদেশি সঙ্গীত শিল্পী।
আবদুল জব্বারের জন্ম কবে হয়?
১৯৩৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি।
আবদুলের প্রথম একক অ্যালবামের নাম কি?
“কোথায় আমার নীল দরিয়া”।
আবদুল জব্বারের মৃত্যু কবে হয়?
২০১৭ সালের ৩০ শে আগস্ট।