ভারতের দক্ষিণী চলচ্চিত্র অভিনেতা মহেশ বাবুর জীবনী, Biography of Indian South Film Actor Mahesh Babu in Bengali



ভারতীয় অভিনেতা মহেশ বাবু মূলত একজন তেলুগুভাষী চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে সুবিখ্যাত। ১৯৭৯ সালে ‘নিদ’ চলচ্চিত্রে শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমা জগতে তাঁর সূত্রপাত হয়। তবে ১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রাজাকুমারুডু’ নামক চলচ্চিত্রে তিনি প্রথমবার নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

ভারতের দক্ষিণী চলচ্চিত্র অভিনেতা মহেশ বাবুর জীবনী, Biography of Indian South Film Actor Mahesh Babu

জন্ম ও শৈশব জীবনের বিবরণ,  Birth and Childhood Life Details

 মহেশ বাবুর আসল নাম মহেশ ঘাট্টামানেনি। ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। চেন্নাইয়ে তাঁর জন্ম হয়। মহেশ নিজের বাল্যকালের বেশীরভাগ সময়ই মাদ্রাজে তাঁর নানীর বাড়িতে কাটিয়েছিলেন। তাঁর বাবার নাম কৃষ্ণ ঘাট্টামানেনি, যিনি পেশাগতভাবে অভিনেতা ছিলেন, এর সুবাদে মহেশ মাত্র চার বছর বয়সেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। মায়ের নাম ইন্দিরা দেবী। মহেশের বড় ভাই রমেশ বাবু ঘাট্টামানেনিও পেশায় দক্ষিণী চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং প্রযোজক।

মহেশ বাবুর থেকে বয়সে বড় দুই জন বোন রয়েছে, যাদের মধ্যে একজন পদ্মাবতী ঘাট্টামানেনি এবং অন্যজন অভিনেত্রী এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক মঞ্জুলা ঘাট্টামানেনি, এছাড়া তাদের এক কনিষ্ঠ বোন আছে, যার নাম প্রিয়দর্শিনী ঘাট্টামানেনি। মহেশ এবং তাঁর সকল ভাই বোনই ছোটবেলায় শিশু শিল্পী হিসেবে দক্ষিণী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

বাবা কৃষ্ণ ঘাট্টামানেনি সব সময় লক্ষ্য রাখতেন যেন সন্তানরা যথেষ্ট পরিমাণে তাঁর সান্নিধ্য পায়। এর জন্য স্কুলের ছুটির সময়গুলোতে তিনি নিজের বাচ্চাদেরকে শ্যুটিং এর জায়গায় নিয়ে যেতেন। মহেশ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে অনেকবার একথা জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে এর ফলেই তাঁর চলচ্চিত্রে অভিনয় করার স্পৃহা জেগেছিল। শৈশবে চলচ্চিত্রের সেট যেন ছিলো তাদের খেলাঘর। সেজন্যই অল্প বয়সেও তিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে ভয় পান নি। 

জন্ম ও শৈশব জীবনের বিবরণ

শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আল-মুতীর জীবনী, Biography of Abdullah-Al-Muti in Bengali

শিক্ষা জীবনের ইতিহাস,  Education 

অভিনেতা মহেশ বাবু চেন্নাইয়ের সেন্ট বেড়েস বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছিলেন। পরবর্তিতে মহেশ চেন্নাইয়ের লয়োলা মহাবিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

মহেশবাবুর ব্যক্তিগত জীবন, Mahesh Babu’s personal life

মহেশ বাবু সাবেক মিস ইন্ডিয়া তথা বলিউড অভিনেত্রী নম্রতা শিরোদকর-এর সাথে দীর্ঘ পাঁচ বছর প্রেম করেন। তাছাড়া নম্রতা ‘ভামসি’ নামক চলচ্চিত্রে মহেশের সাথে সহ-শিল্পী হিসেবে কাজও করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে, ২০০৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তে মুম্বাই শহরে এই জুটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তাদের এক পুত্র ও এক কন্যা, অর্থাৎ দুটি সন্তান রয়েছে। পুত্রের নাম গৌতম কৃষ্ণ(জন্ম ২০০৬ সালে) এবং কন্যার নাম সিতারা (জন্ম ২০১২ সালে)।

মহেশবাবুর ব্যক্তিগত জীবন

মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি সৈয়দ আলাওল, Syed Alaol Biography in Bengali

কর্মজীবন, Career 

মহেশ বাবু নিজের বড় ভাই রমেশ বাবুর দ্বারা পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নিদ’ -এ ছোট একটি চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেছিলেন। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র চার বছর। এছাড়াও তিনি পিতার দ্বারা পরিচালিত সাতটি চলচ্চিত্রে একজন শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন।

কর্মজীবন

১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ সাল অবধি মহেশ কোন কোন ছবিতে কাজ করেছেন !

 বড় ভাই রমেশ বাবুর চলচ্চিত্র নিদ – এ অভিনয়ের দ্বারা অভিনয় জীবন শুরু করার কিছু কাল পর, ১৯৮৩ সালে ৮ বছর বয়সে তিনি কড়ি রামাকৃষ্ণা পরিচালিত ছবি ‘পোরাতাম’ এ অভিনয়ের সুযোগ পান। এইভাবে শিশু শিল্পী হিসেবেও মহেশ বাবু বেশ সফলতা লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি প্রথমবার নিজের বাবার পরিচালিত এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে ‘কোদুকু দিদ্দিনা কাপুরাম’ এ মহেশ বাবু দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তাছাড়া ১৯৯০ সালে কিশোর মহেশ ‘বালাচন্দ্রুদু এবং আন্না তাম্মুদু’ তে অভিনয় করেছিলেন। এরপর পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় মহেশ বাবু কিছু সময়ের জন্য লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান।

যুগাবতার পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনী, Biography of Shri Ramakrishna Paramahamsa in Bengali

১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মহেশের কোন কোন ছবি মুক্তি পায় !

অভিনেতা মহেশ বাবু ১৯৯৯ সালে মহা সাড়ম্বড়ে জনসমক্ষে ফিরে এসেছিলেন। “রাজু কুমারুডু” তে তিনি প্রথম বার নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন। উক্ত ছবিতে বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিন্তার সহ-অভিনেতা ছিলেন তিনি। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকে ভক্ত এবং গণমাধ্যম অভিনেতাকে আদর করে “‘প্রিন্স মহেশ’” ডাকতে শুরু করে দেয়। এর পর থেকে একের পর এক সফল ছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছিলেন তিনি।  ২০০৩ সালে ভূমিকা চাওলার সাথে অভিনীত দক্ষিণী চলচ্চিত্র ‘ওক্কাদু’ মুক্তি পায়, এই চলচ্চিত্রটি মহেশ বাবুর অভিনয় জীবনের একটি মাইলফলক হিসেবে ধরা হয়।

১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মহেশের কোন কোন ছবি মুক্তি পায়

ওক্কাদু’তে মহেশ একজন তরুণ কাবাডি খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এই ছবির জন্য তিনি নিজের প্রথম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তাছাড়া ছবিটি সমসাময়িককালে সর্বোচ্চ আয় করা চলচ্চিত্র। আমিশা প্যাটেলের সাথে অভিনীত “ন্যানী” ছবি ২০০৪ সালে মুক্তি পায়। ছবিটির তাঁর বোন মঞ্জুলার প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছিল। একই বছরে ভাই রমেশের প্রযোজনায় “অর্জুন” ছবি মুক্তি পায়। এই ছবিটিতে  আবেগী অভিনয় করার জন্য মহেশ নন্দী বিশেষ জ্যুরি পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

২০০৫ থেকে ২০১০ সাল অবধি কোন ছবিতে কাজ করেছেন?

২০০৫ সালে তৃষা কৃষ্ণানের সাথে ‘আতাডু’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে মহেশ বাবু আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করেন। চলচ্চিত্রটি পোল্যান্ডে “পোসজুকিয়ানি” নামে মুক্তি দেওয়া হয়। এটাই প্রথম পোল্যান্ডে মুক্তি পাওয়া তেলেগুভাষী চলচ্চিত্র। তাছাড়া চলচ্চিত্রটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল এবং তখনকার সময়ে ১০৪ লাখ টাকা আয় করতে সক্ষম হয়েছিল। এরপর তিনি বোন মঞ্জুলা এবং বৈষ্ণ একাডেমীর যৌথ প্রযোজনায় ২০০৬ সালে নির্মিত ছবি ‘পোকিরিতে’ অভিনয় করেন। তেলেগু চলচ্চিত্র শিল্পের আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে পোকিরি সর্বাধিক আয় করা চলচ্চিত্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য দ্বিতীয় বারের মত ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতা পুরস্কার (তেলুগু) পান মহেশ।

এই বছরে শাইনিকুডু ছবি মুক্তি পায় যেখানে মহেশের সহ অভিনেত্রী ছিলেন তৃষা। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে তরুণ পরিচালক সুরেন্দর রেড্ডির “আথিধি” সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি, এই ছবিতে সহ অভিনেত্রী হিসেবে পেয়েছিলেন অমৃতা রাওকে। আথিধি ছবি মুক্তি পাওয়ার পর কিছু সময়ের জন্য নিজের পরিবারকে অধিক সময় দিতে শুরু করেন মহেশ, কারণ তাঁর স্ত্রীর বাবা অসুস্থ হয়ে মারা যান এবং এর কিছুদিন পরই তাঁর শ্বাশুড়ীও ক্যান্সারে মারা যান।

২০০৫ থেকে ২০১০ সাল অবধি কোন ছবিতে কাজ করেছেন?

এর কিছুদিন পর ২০০৮ সালে বন্ধু ত্রিবিক্রম দ্বারা পরিচালিত ছবি “জলসায়” তিনি কন্ঠদান করেছিলেন। এরপর তিন বছরের দীর্ঘ বিরতি নিয়ে তেলুগু চলচ্চিত্র শিল্পের এই নামজাদা সুপারস্টার ২০১০ সালে আবার রূপালি পর্দায় ফিরে আসেন নতুন ছবি ‘খালেজা’ নিয়ে। উক্ত ছবি মুক্তি পাওয়ায় প্রথম তিন দিনেই আড়াইশো কোটি টাকা আয় করে।

বিশিষ্ট ধর্ম সংস্কারক কেশবচন্দ্র সেনের জীবনী, Biography of Keshab Chandra Sen in Bengali

২০১১ থেকে ২০১৭ সাল অবধি মহেশ বাবু কোন ছবিগুলোতে অভিনয় করেছেন!

 মহেশ বাবু সামান্থা রুথ প্রভুর সাথে জুটি বেঁধে ‘দোকুদু’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন, যেখানে তিনি একজন সৎ পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। চলচ্চিত্র টি বেশ সাড়া জাগায় এবং CNN-IBN মহেশকে সেই সালের Actor of the Year(২০১১) ঘোষণা করে। এই ছবিতে তাঁর অভিনয়ের জন্য তিনি তৃতীয় বারের মত ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে কাজল আগরওয়ালের সাথে ‘বিজনেসম্যান’ (২০১২) ছবিতে অভিনয় করেন মহেশ।

২০১১ থেকে ২০১৭ সাল অবধি মহেশ বাবু কোন ছবিগুলোতে অভিনয় করেছেন!

তবে এই ছবিতে তিনি খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।  প্রথম দিনেই ছবিটি ১৮৭.৩ মিলিয়ন আয় করে। তাছাড়া উক্ত ছবিতে মহেশ বাবু প্রথমবারের মত গানে কন্ঠ দেন। দক্ষিণ ভারতের সুপারস্টার রজনীকান্ত এর পর মহেশ বাবুকেই সর্বাধিক পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

করুণাময়ী রাণী রাসমণির জীবনী, Biography of Rani Rashmoni in bengali

পুরস্কার ও সম্মাননা, Awards and recognition 

অভিনেতা মহেশ বাবু নিজের অভিনয়ের দ্বারা সকলের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন, পাশাপাশি জয় করেছেন বেশ কিছু পুরস্কার। তিনি সাতটি রাজ্য নন্দী পুরস্কার, চারটি ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতা-তেলুগু পুরস্কার, তিনটি সিনেমা পুরস্কার এবং একটি দক্ষিণ ভারতীয় আন্তঃর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তিনি অন্ধ্র প্রদেশ এবং দক্ষিণ ভারতের বেশ কিছু পণ্যের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করেন। তিনি থামস আপের জাতীয় শুভেচ্ছা দূত।

পুরস্কার ও সম্মাননা

বাংলাদেশী আমেরিকান পরিসংখ্যানবিদ,মীর মাসুম আলীর জীবনী, Biography of Mir Masoom Ali in Bengali

উপসংহার, Conclusion 

  মহেশ বাবু একজন দক্ষিণী চলচ্চিত্র অভিনেতা হলেও ভারতের অন্যান্য প্রান্তেও তাঁর অনুরাগী ছড়িয়ে আছে। তাঁর অভিনীত বেশ কিছু চলচ্চিত্র বক্সঅফিসে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে, যেমন মুরারী (২০০১), বিজনেসম্যান (২০১২) এবং শিথামা ভকিতলো সিরিমাল্লে চেট্টু (২০১৩) প্রভৃতি। মহেশের অভিনীত শ্রীমানথুডু(২০১৫) সিনেমা তেলুগু সিনেমায় ইতিহাসের ২য় সর্বোচ্চ মুনাফাকারী চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমানে তিনি তাঁর পরবর্তী ছবি ব্রহ্মউৎসব- এর কাজ করছেন।

মহেশ বাবু একজন দক্ষিণী চলচ্চিত্র অভিনেতা হলেও ভারতের অন্যান্য প্রান্তেও তাঁর অনুরাগী ছড়িয়ে আছে

Frequently asked questions

মহেশ বাবু কে?

ভারতীয় অভিনেতা মহেশ বাবু মূলত একজন তেলুগুভাষী চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে সুবিখ্যাত।

মহেশ বাবু কবে জন্মগ্রহণ করেন?

১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে 

মহেশ বাবুর প্রথম ছবি কোনটি?

“নিদ”, এই ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসেবে কাজ করেন।

নায়ক হিসেবে মহেশের প্রথম ছবি কোনটি ছিল?

“রাজু কুমারুডু”

Recent Posts