বিশ্ব বরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী, Biography of renowned poet Rabindranath Tagore in Bengali


মহৎ প্রতিভার আবির্ভাব সব দেশ ও জাতির জীবনে এক বাঞ্ছিত স্মরণীয় মুহূর্ত ।তাঁরা নতুন যুগের বাণীদূত। তাঁরা জাতিকে অনুপ্রাণিত করেন উজ্জীবন মন্ত্রে। তাঁদের ধ্যান দৃষ্টিতেই উন্মোচিত হয় সত্যের পথ।রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এমনই এক বিস্ময়কর প্রতিভা। খণ্ডকালের হয়েও তিনি সর্বকালের । তিনি দেশ ও জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।তিনি শুধু ভাষা সাধকই নন: নন শুধুই  কবিশ্রেষ্ঠ। তিনি চিন্তাবিদ ,দার্শনিক; তিনি মনুষ্যত্বের সাধক ,ভারত আত্মার  বিগ্রহ, অন্যায় অবিচারের বলিষ্ঠ প্রতিবাদ । তিনি সুপ্তিময় জাতির স্বপ্নভঙ্গের গান; জড়তাগ্রস্ত জীবনের গতির ছন্দ ।তিনি দেশব্রতীর সঠিক পথের নিদর্শন। তাঁর কবি প্রকৃতি ,সীমার সঙ্গে অসীমের, খণ্ডের সঙ্গে পূর্ণের ,ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে বিশ্ব জীবনের চিরন্তন প্রবাহ উপলব্ধি করে তিনি আকণ্ঠ ডুব দিয়েছেন এবং সেই অভিজ্ঞতাকে ব্যক্ত করেছেন সাহিত্যে । প্রখ্যাত সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের  কথায়, “কবিগুরু, তোমাদের প্রতি চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের সীমা নাই ।“ রবীন্দ্রনাথ তাই আমাদের অহংকার, আমাদের অস্তিত্ব ,আমাদের প্রেরণা ,আমাদের সমৃদ্ধি

Contents hide
বিশ্ব বরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী
Pin it

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবির্ভাব, Emergence of Rabindranath Tagore

উনিশ শতকের প্রথম ও দ্বিতীয় অর্ধে বাংলা সাহিত্য -সমাজে এল একপ্রকার প্রাণ সমৃদ্ধ নতুন দিনের জোয়ার : রচিত হলো ভাবি প্রতিভার উর্বর ভূমি। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিবার তখন শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান, আধুনিকতার প্রাণকেন্দ্র জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ক্ষেত্র । প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের  যুগল ভাবধারায় পুষ্ট স্বতন্ত্র -উজ্জ্বল এই পরিবার ।এই পরিবারেই ১৩৬৮ বঙ্গাব্দের  ২৫ শে বৈশাখ জন্ম নিলেন এক বিস্ময়কর প্রতিভা ; সেই প্রতিভার নাম রবীন্দ্রনাথ ।

কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের পুত্র   রবীন্দ্রনাথের জন্ম বিশ্বের কাছে এক মহান  আশীর্বাদস্বরূপ।   শৈশব থেকে আমৃত্যু তিনি নানা স্থানে ঘুরেছেন ,বিভিন্ন স্থানে থেকেছেন এবং রেখে গেছেন তাঁর জীবনব্যাপী কর্মসাধনার অসামান্য কীর্তিকে। জীবনে বহু ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করেছেন, প্রিয়জনদের অকাল বিয়োগকে কাছে থেকে দেখেছেন ,পরাধীন ভারতবর্ষে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করার জন্য নানান কর্মপন্থা গ্রহণ করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবির্ভাব
Pin it

শিলাইদহের জমিদারি দেখাশোনা কালে সাধারণ মানুষের সান্নিধ্যে এসেছেন ,শান্তিনিকেতনে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং  এই সবের মধ্যে দিয়ে তাঁর কর্মযজ্ঞকে প্রসারিত করতে চেয়েছেন । ছ বছর বয়সেই তিনি ভর্তি হন ওরিয়েন্টাল  সেমিনারিতে। কিছুদিন পরেই বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের  যান্ত্রিকতায় ও পরিবেশের নিষ্প্রাণতায় শিশুমন ক্ষুব্ধ হয় ।বছরখানেক পরেই ওরিয়েন্টাল সেমিনারি ছেড়ে দিয়ে তিনি ভর্তি হলেন নর্মাল স্কুলে । সেখান থেকে গেলেন বেঙ্গল অ্যাকাডেমিতে; এই সময় তাঁর উপনয়ন হয়। পিতার সঙ্গে গেলেন বোলপুর আর সেখান থেকে ডালহাউসি পাহাড়। প্রকৃতিকে দুচোখ ভরে দেখলেন।

এই সময় স্বয়ং মহর্ষি আকাশের গ্রহ তারা দেখে পুত্রকে সৌর লোক সম্বন্ধে শিক্ষা দিতেন। হিমালয় থেকে ফিরে আবার সেই বেঙ্গল অ্যাকাডেমি। কিন্তু বিদ্যালয়ের গতানুগতিকতা তাঁকে বাঁধতে পারল না, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি ছেড়ে গেলেন সেন্ট জেভিয়ার্স  স্কুল কিন্তু  সেখানেও ঠাঁই হলো না। এবার প্রবাসের হাতছানি। ১৮৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে পাড়ি দিলেন বিলেতে ।সেখানে পাবলিক স্কুলে ভর্তি হলেন  আর তার  কিছুদিন পর সেখান থেকে গেলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেড় বছর পরে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন। ব্যারিস্টারি পড়ার উপলক্ষ নিয়ে  আবার একবার বিলেতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন কিন্তু মাদ্রাজ থেকে ফিরে এসেছিলেন ।

 প্রতিভার নাম রবীন্দ্রনাথ
Pin it

বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বার, Biography of famous vocalist Abdul Jabbar in Bengali

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  কাব্যচর্চা, Poetics of Rabindranath Tagore

ঠাকুর পরিবারের সৃষ্টিশীল পরিমণ্ডলেই রবীন্দ্রনাথের কাব্যচর্চা শুরু। বড়দের কাছ থেকে পেতেন উৎসাহ ও নতুন বউঠান  কাদম্বরী দেবী তাঁকে দিতেন প্রেরণা । ‘হিন্দুমেলা’,  বিদ্বজ্জন  সভায়  তিনি কবিতা পাঠ করেছেন ।তেরো বছর বয়সে ‘তত্ত্ববোধনী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হলো তাঁর প্রথম কবিতা ; কবি প্রাণে দোলা দিল সৃষ্টির পূবালি হাওয়া।  নববসন্তের সৃষ্টি প্রাচুর্যে ভরে উঠল তাঁর মনের সাজি। তিনি লিখলেন ‘বনফুল’। প্রকাশিত হলো ‘কবি কাহিনি ‘।তেরো থেকে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর রচিত কবিতার সম্ভার নিয়ে বেরোল “শৈশব সংগীত’। ষোল সতেরো বছর বয়সে লিখলেন ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী ‘।উত্তরকালের কবি-শ্রেষ্ঠের  এ হল নেপথ্য প্রস্তুতিপর্ব ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  কাব্যচর্চা
Pin it

চলচ্চিত্রের রূপকার সত্যজিৎ রায়ের জীবনী, Biography of Satyajit Ray in Bengali

রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সাধনা, Literary pursuits of Rabindranath Tagore

সাহিত্য সাধনার নবপর্যায়ে সৃষ্টি প্রাচুর্যে ভরে উঠল তাঁর কাব্যের সোনার তরী।  যৌবনের উচ্চ গতি তরঙ্গে খুলে গেল কাব্যের উৎস-মুখ। প্রেম- প্রকৃতির-সৌন্দর্য- স্বদেশকে ঘিরে কবি ভাবনা হল উচ্ছ্বসিত ,বন্ধন হারা । ‘সন্ধ্যা সঙ্গীত ‘থেকে ‘কড়ি ও কোমল’ পর্যন্ত এক বিশেষ পর্ব আর ‘প্রভাতসংগীতে’ সেই বেদনা মুক্তির উল্লাস। শুরু হল এক মহৎ প্রতিভার দীর্ঘ পথপরিক্রমা। ‘মানসী’ কাব্যই শোনা গেল দেহাতীত প্রেম চেতনার স্পষ্ট সুর। ‘চিত্রায়’ কবি শুনলেন জীবনদেবতার অলক্ষ পদধ্বনি ।’চৈতালি ‘থেকে ‘কল্পনা’ পর্যন্ত আবার অন্য সুর ।অতীতে ভারতের স্বর্ণযুগের ধূসর পৃথিবীতে কবি -মনের অভিসার।

রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সাধনা
Pin it

‘নৈবেদ্য ‘,’খেয়া’, ‘গীতাঞ্জলি’, ‘গীতিমাল্য’, ‘গীতালি’ রবীন্দ্র কবির জীবনের এক বিশেষ অধ্যায় যেখানে তাঁর আধ্যাত্ম আকৃতি পূর্ণতা লাভ করে। কিন্তু শুধুমাত্র অসীমের সাধনায় তিনি বন্দী থাকলেন না ; বলাকার পাখায় পেলেন মত্ত জীবনের ঘ্রাণ। ‘বলাকা ‘,’পলাতকা ‘, ‘পূরবী’ ও ‘মহুয়া’ এই পর্বের রচনা ।এখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মর্ত্যপ্রীতি, গতিতত্ত্ব আর যৌবন স্তুতি। ‘পুরবী’ তে বিগত যৌবনের স্মৃতি রোমন্থনের বিষণ্নতা; ‘মহুয়া’ দ্বিতীয় যৌবনের  মায়ালোকের কাব্য ।

এরপর পরিশেষ থেকে ‘শেষ লেখা’ পর্যন্ত পরিক্রমার শেষপর্যায়। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা ‘সেঁজুতি’  , ‘আকাশপ্রদীপ’ ,’নবজাতক’, ‘সানাই’ ‘রোগসজ্জায় ‘ ,’জন্মদিনে’, ‘শেষলেখায়’ কবির পরিণত মনের জিজ্ঞাসা। শুধু কবিতা নয় নাটক- প্রবন্ধ -উপন্যাস -ছোটগল্প- সমালোচনায় রসরচনা -বিজ্ঞান -ব্যাকরণ -শিশুসাহিত্য -সংগীত- ভ্রমণকাহিনি লিখেছেন তিনি । তাঁর  লোকান্তর প্রতিভার ছোঁয়াতেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এত বৈভব ;এত প্রাচুর্য। ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য পেলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মান -“নোবেল পুরস্কার”।

‘চোখের বালি’ থেকেই বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে মোড় ফেরার ঘন্টাধ্বনি সূচিত হয়, ‘গোরা’র মধ্যেই প্রকাশিত হয় শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের  একসময়ের সামগ্রিক রূপ ।বঙ্গভঙ্গের পটভূমিকায় রচিত হয় ‘ঘরে বাইরে’। ‘চতুরঙ্গ’ উপন্যাসে আঙ্গিকের বৈচিত্র্য চমকপ্রদ। আর ‘শেষের কবিতা’র মতো রোম্যান্টিক প্রেমের উপন্যাস কমই আছে । ছোট গল্পকার হিসেবে রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’, ‘পোস্টমাস্টার’, ‘সুভা’, ‘ক্ষুদিত পাষাণ’, ‘দান প্রতিদান’, ‘জীবিত ও মৃত’, ‘স্ত্রীর পত্র’ প্রভৃতিবাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চিরকাল । 

চোখের বালি
Pin it

বিশ্ববন্দিত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গানের জগতেও আনলেন নতুনধারা। আনন্দ- বেদনায়, দুঃখে -সুখে, উৎসব অনুষ্ঠানে, মিলন- বিরহের ,জীবন- মৃত্যুতে তাঁর সেই সব গানগুলি মানুষকে প্রেরণা দেয় ,শান্ত করে, উজ্জীবিত করে। তাঁর রচিত ‘জনগণমন অধিনায়ক’ গানটি স্বাধীন ভারতের জাতীয় সঙ্গীত।  কথাও সুরের সমন্বয় সঙ্গীতেও তাই রবীন্দ্রনাথ এক বিরল ব্যক্তিত্ব ।

সাহিত্য সাধনা
Pin it

করুণাময়ী রাণী রাসমণির জীবনী, Biography of Rani Rashmoni in bengali

রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গিতে  সমাজ ও স্বদেশ, Society and Swadesh in Rabindranath’s view

রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গি
Pin it

রবীন্দ্রনাথ শুধু স্বপ্নলোকের বিচরণ করেননি ; সমকালীন বহু ঘটনাই তাঁর মনে ঝড় তুলেছিল।রাজনীতির সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগ ছিল না তবু মুঢ় -ম্লান – মূক নবজাতকের মুখে প্রতিবাদের ভাষা দিয়েছিলন । দেশপ্রেমের উষ্ণ অনুরাগে অনুপ্রাণিত করেছিলেন সাধারণ মানুষকে।জালিয়ানওয়ালাবাগে ইংরেজের পাশবিক হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন ;পরিত্যাগ করেছিলেন ইংরেজদের দেওয়া রাজকীয় খেতাব -“নাইট” উপাধি ।সোচ্চার হয়েছিলেন বাংলার তরুণ বিপ্লবীদের ওপর । ইংরেজদের চণ্ডনীতির বিরুদ্ধে সমকালীন অনেক রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ ই তিনি সমর্থন করেননি। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক উপলব্ধির গভীরতা, দূরদর্শিতার অভ্রান্ত স্বাক্ষর রেখে গেছেন  তাঁর বহু রচনায়।

রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গিতে  সমাজ ও স্বদেশ
Pin it

মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি সৈয়দ আলাওল, Syed Alaol Biography in Bengali

রবীন্দ্রনাথের গঠনমূলক কাজ, Formative works of Rabindranath

রবীন্দ্রনাথ শুধু কবি শ্রেষ্ঠই নন সাংগঠনিক কাজেও তিনি ছিলেন সমান দক্ষ। শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি আদর্শ শিক্ষাকেন্দ্রে যেখানে তিনি শিক্ষা প্রদান করতেন। প্রকৃতির উদার প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা পেয়েছিল যান্ত্রিকতাময় শিক্ষার হাত থেকে মুক্তির আনন্দ।কালক্রমে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। এ যেন নবজীবন সাধনারই এক তপোবনে; বিশ্বের সকল মানুষ, সকল মহান মতের একত্রীকরণের এক বরণীয় সাধনা ভূমি। বিশ্বভারতীর অনতিদূরে গড়ে তুলেছিলেন ‘শ্রীনিকেতন’। কৃষকদের শিক্ষা, চাষের কাজে উৎসাহ দান, কুটির শিল্পের উন্নতি বিধান -এই হল প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্যে ।

রবীন্দ্রনাথের গঠনমূলক কাজ
Pin it

নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ: ডা. নাসিমা আক্তারের জীবনী, Biography of Dr. Nasima Akter in Bengali

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাপ্ত পুরস্কার ও স্বীকৃতি, Awards and recognition received by Rabindranath Tagore

রবীন্দ্রনাথের সর্বজনপ্রিয় গ্রন্থ গীতাঞ্জলীর জন্য তিনি সারা বিশ্বে  বিশাল স্বীকৃত পান |  এই কাব্যগ্রন্থের জন্যই তিনি ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত হয়েছিলেন এই বিশ্ববরেণ্য কবিকে “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” অভিধায়ে ভূষিত করা হয়ে থাকে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাপ্ত পুরস্কার ও স্বীকৃতি
Pin it

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহাপ্রয়াণ, Rabindranath Tagore’s death

অবশেষে সকল উজ্জ্বলতার অবসান ঘটিয়ে ‘রবি’ গেলেন অস্তাচলে  । ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে  ২২শে শ্রাবণ ঘনঘোর বাদল দিনে  ই এই মহাজীবন  মর্ত্যলোক ছেড়ে মহাপ্রস্থানের পথে পাড়ি দিলেন। কিন্তু দেশ ও জাতির কাছে রেখে গেলেন অফুরান  ঐশ্বর্যের ভান্ডার। 

কবিগুরুর জীবনের নানা দিক, Kobigurur jiboner nanan dik

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু সাহিত্যের জগতে নয়, বরং বাঙালির জীবনদর্শন, সংস্কৃতি আর রুচিবোধেও রেখে গেছেন গভীর ছাপ। তাঁর কবিতা, গান, নাটক কিংবা উপন্যাসে যেমন রয়েছে জীবনের মর্ম, তেমনই তাঁর ব্যক্তিজীবনেও ছিল বিশিষ্টতা ও শৃঙ্খলা।

কবিগুরুর জীবনের নানা দিক
Pin it

পোশাকের ভিন্ন ধারা

রবি ঠাকুরের পোশাকেও ছিল অনন্যতা। তিনি জোব্বা আর পায়জামা পরতেন বেশি, বিশেষ করে বাড়িতে থাকলে। সাধারণত গেরুয়া বা সাদা রঙের জোব্বা পরতেন। অনুষ্ঠান বা পূজার সময় পরতেন ধুতি ও রেশমের উত্তরীয়—মৌসুমভেদে রঙেও থাকত বৈচিত্র্য।

Pin it

নিয়মে বাঁধা রুটিন

তিনি খুব শৃঙ্খলাবান জীবনযাপন করতেন। ভোর ৪টায় উঠতেন, স্নান করে পূজা করতেন, তারপর সকাল ৭টা পর্যন্ত লিখতেন। জলখাবার শেষে আবারও লেখায় ডুবে যেতেন। দুপুরে খেয়ে একটু বিশ্রাম আর বইপড়া ছিল তাঁর রোজকার অভ্যাস। সন্ধের আগেই রাতের খাবার সেরে ফেলতেন।

নিয়মে বাঁধা রুটিন
Pin it

নানা ছদ্মনাম

রবীন্দ্রনাথ একাধিক ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন। যেমন—ভানুসিংহ, আন্নকালী পাকড়াশী, অকপটচন্দ্র লস্কর, ষষ্ঠীচরণ দেব শর্মা, দিকশূন্য ভট্টাচার্য। এছাড়াও নবীন কিশোর শর্মণ, বাণীবিনোদ বিদ্যাবিনোদ, শ্রীমতী কনিষ্ঠা, শ্রীমতী মধ্যমা প্রভৃতি নামেও লিখেছেন। চীনের সরকার পর্যন্ত তাঁকে ডাকতেন ‘চু চেন তান’ নামে।

Pin it

হোমিওপ্যাথির প্রতি আস্থা

রবীন্দ্রনাথ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় বিশ্বাসী ছিলেন। নিজে যেমন এই চিকিৎসা গ্রহণ করতেন, তেমনই নিজের জমিদারির প্রজাদের জন্য হোমিও চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থাও করেছিলেন। এমনকি ‘হেলথ কো-অপারেটিভ’ তৈরি করে তিনি এই ধরণের চিকিৎসা সেবার পথও খুলে দেন।

রবীন্দ্রনাথ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় বিশ্বাসী ছিলেন।
Pin it

অভিনয়েও প্রতিভা

মাত্র ১৬ বছর বয়সে মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথম নাটক ছিল ‘এমন কর্ম আর করব না’। পরে ‘বাল্মিকী প্রতিভা’ নাটকে বাল্মিকীর চরিত্রে অভিনয় করেন নিজেই। শিশিরকুমার ভাদুড়ি পর্যন্ত একে দেশের শ্রেষ্ঠ অভিনয় বলেছিলেন।

অভিনয়েও প্রতিভা
Pin it

গাছপালার প্রেম

রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতি ও গাছগাছালিকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় ১০৮টি গাছ ও ফুলের নাম পাওয়া যায়। অনেক বিদেশি ফুলের জন্য বাংলা নামও তিনিই দিয়েছেন—যেমন অগ্নিশিখা, তারাঝরা, নীলমণিলতা ইত্যাদি।

রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতি ও গাছগাছালিকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন।
Pin it

খেলাধুলাতেও আগ্রহ

সাহিত্যের পাশাপাশি খেলাধুলাও ছিল তাঁর আগ্রহের জগৎ। মোহনবাগানের ১৯১১ সালের ঐতিহাসিক জয়ের পর ‘দে গোল… গোল’ নামে কবিতা লেখেন তিনি। এমনকি জুডো খেলার প্রচলনও দেশে তাঁর মাধ্যমেই শুরু হয়।

খেলাধুলাতেও আগ্রহ
Pin it

বিজ্ঞাপনের জন্য লেখালেখি

তাঁর লেখার খ্যাতি এতটাই ছিল যে, অনেক সংস্থা তাঁকে বিজ্ঞাপনের লাইন লেখার অনুরোধ করত। ‘ব্যবহার করে সন্তোষলাভ করেছি…’ এই বিখ্যাত বিজ্ঞাপন-লাইন তিনিই লিখেছিলেন কাজল কালির জন্য।

বিজ্ঞাপনের জন্য লেখালেখি
Pin it

নোবেল পুরস্কারের অর্থ জনসেবায়

নোবেল পুরস্কার থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কৃষকদের জন্য একটি ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি সড়ক ও সেতু মেরামতের মতো জনহিতকর কাজেও এই টাকা ব্যয় করেন।

Pin it
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহাপ্রয়াণ
Pin it

উপসংহার , Conclusion 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  ছিলেন মহাকবি বাল্মীকি- বেদব্যাস- কালিদাসের স্বার্থক উত্তরসূরি ; তিনিই ছিলেন মনুষ্যত্বের সাধক ;ছিলেন ভারত -আত্মার বাণী দূত। সুরের আরাধনা করতে গিয়েও তিনি মানবতাকে বিসর্জন দেননি ;বিস্মিত হননি স্বদেশ ও সমাজকে। তিনি আধুনিক ভারতের নবতীর্থক্ষেত্র ।রবীন্দ্রনাথ হলেন  প্রকৃতপক্ষে  সমগ্র জীবনের কবি -যাঁর মধ্যে অখন্ড ভারত আত্মার সন্ধান পাওয়া যায়।

রবীন্দ্রনাথ হলেন  প্রকৃতপক্ষে  সমগ্র জীবনের কবি
Pin it

FAQ (সম্ভাব্য প্রশ্নাবলি)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কয়টি ছদ্মনাম ছিল?

৯টি (ভানুসিংহ ঠাকুর, অকপটচন্দ্র, আ্ন্নাকালী পাকড়াশী, দিকশূন্য ভট্টাচার্য, নবীন কিশোর শর্মণ, ষষ্ঠীচর দেবশর্মা, বাণীবিনোদ বিদ্যাবিনোদ, শ্রীমতি কনিষ্ঠা, শ্রীমতী মধ্যমা ।

রবীন্দ্রনাথকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবে ডি.লিট উপাধী দেয় ?

 ১৯৩৬ সালে।

কোন বাঙালি প্রথম গ্রামীন ক্ষুদ্রঋণ ও গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেন ?

রবীন্দ্রনাথ (এ জন্য তিনি পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমেরিকার আরবানায় ইলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান কৃষি ও পশুপালন বিদ্যায় প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে)।

আর্জেটিনার কোন মহিলা কবিকে রবীন্দ্রনাথ বিজয়া নাম দেন ?

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো (তাঁকে উত্সর্গ

করেন পূরবী কাব্য)।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর কতটি নাটকে অভিনয় করেন ?

১৩ টি।

রবীন্দ্রনাথের পরিবারের বংশের নাম কি ছিল ?

পিরালি ব্রাহ্মণ

রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক উপাধী ?

কুশারী।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর পিতা-মাতার কততম সন্তান?

চতুর্দশ সন্তান এবং অষ্টম পুত্র।

গীতাঞ্জলি প্রকাশিত হয় কবে ?

১৯১০ সালে।


Recent Posts