জয়নুল আবেদিন বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশে চিত্রশিল্প বিষয়ক শিক্ষার প্রসারে আমৃত্যু প্রচেষ্টার জন্য তিনি শিল্পাচার্য হিসেবে অভিহিত হন।তাঁর সৃষ্ট বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে অন্যতম হল দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা, মই দেয়া, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক, বিদ্রোহী ইত্যাদি। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে গ্রামবাংলার উৎসবকে ভিত্তি করে তৈরি তাঁর বিখ্যাত ৬৫ ফুট দীর্ঘ ছবি ‘নবান্ন’।
জয়নুল আবেদিনের জন্মস্থান ও শৈশব, Zainul Abedin’s birth and childhood in bangla
জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে ডিসেম্বর তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহুকুমার কেন্দুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম তমিজউদ্দিন আহমেদ, তিনি পেশায় ছিলেন পুলিশের দারোগা (সাব-ইন্সপেক্টর) এবং মাতা জয়নাবুন্নেছা ছিলেন গৃহিনী। জয়নুল আবেদিনরা নয় ভাইবোন ছিলেন। তাদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবার বড়। জয়নুলের পরিবারের অভ্যন্তরীণ পরিমণ্ডলেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয় ।
লক্ষ্মীরতন শুক্লা – বাংলার গর্ব ~ Biography of Laxmi Ratan Shukla in Bengali
শিল্পকলার প্রতি আগ্রহ, Inclination towards art and painting
শৈশবকাল থেকেই শিল্পাচার্য জয়নুল ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। মাছ, পাখির বাসা, পাখি, গরু-ছাগল, ফুল-ফল এঁকে মাতা-পিতাকে দেখাতেন। ছেলেবেলা থেকেই তাঁর শিল্পকলার প্রতি ছিল গভীর আগ্রহ। জয়নুল নিজের শৈশবের বেশিরভাগ সময়ই ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে কাটান। নদী ও খোলা প্রকৃতি তাঁকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। পরবর্তীকালেও ব্রহ্মপুত্র নদী তাঁর অনেক চিত্রকর্মে আবির্ভূত হয়।
জয়নুল আবেদিনের শিক্ষাজীবন, Zainul Abedin’s education
যখন জয়নুলের বয়স মাত্র ষোল বছর, তিনি বন্ধুদের সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায় চলে যান শুধুমাত্র গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য। সেখান থেকে ঘুরে আসার পর থেকে সাধারণ পড়াশোনায় জয়নুল আবেদিনের আর মন বসছিল না, সেই কারণে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক পরীক্ষার পূর্বেই স্কুলের পড়ালেখা ত্যাগ করে তিনি কলকাতায় চলে যান। মায়ের সমর্থনে সেখানকার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি হন। জয়নুলের মা আঁকা শেখার প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে তাঁকে কলকাতার আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য করেন। জয়নুল ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে অধ্যয়ন করেন। তিনি সেখানে পাঁচ বছর ইউরোপীয় একাডেমিক স্টাইল শিখেছিলেন । ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগ থেকে স্নাতক স্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারী করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৫১ সালে জয়নুল দুই বছরের জন্য স্লেড স্কুল অফ আর্ট-এ পড়াশুনা করার উদ্দেশ্যে লন্ডনে যান।
দয়ার প্রতিভু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী – Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali
কর্মজীবন, career
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে যায়। দেশভাগ হয়ে দুটি দেশের সৃষ্টি হয় যথা ভারত ও পাকিস্তান। তৎকালীন পূর্ববঙ্গের নতুন নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান যা পরবর্তীকালে ১৯৭১-সালে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জয়নুল আবেদিন ছিলেন পূর্ববঙ্গের প্রথম প্রজন্মের শিল্পীদের পুরোধা ব্যক্তিত্ব । ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে একটি চিত্রকলা বিষয়ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুভূত হয়। জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকা শহরের জনসন রোড স্থিত ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুলের একটি জীর্ণ কক্ষে ‘গভর্নমেন্ট আর্ট ইন্সটিটিউট ‘ স্থাপিত হয়।
সূচনাকালে এর ছাত্র সংখ্যা ছিল মাত্র ১৮ জন। জয়নুল আবেদিন এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম শিক্ষক ছিলেন। এই আর্ট ইন্সটিটিউটটি ১৯৫১ সালে সেগুনবাগিচার একটি বাড়িতে স্থানান্তরিত করা হয়। কিছুকাল পর ১৯৫৬ সালে আর্ট ইন্সটিটিউট ফের স্থানান্তরিত হয় শাহবাগে। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৩ সালে ইন্সটিটিউটটি একটি প্রথম শ্রেণির সরকারি কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং এর নতুন নাম দেওয়া হয় পূর্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়। ১৯৭১-সালে বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পর এই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়’ রাখা হয়। জয়নুল ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শিল্পাচার্য আবেদিনের আগ্রহ ও পরিকল্পনায় সরকার কর্তৃক ১৯৭৫-সালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর ও ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করা হয়। সাম্রাজ্যবাদী নীতির কারণে তৎকালীন পরিস্থিতি বিপর্যয়কর সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও, বৈরী চার্চিল সরকার খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য বৈদেশিক আমদানির ক্ষেত্রে বাধা দিতে থাকে। তখন জয়নুল আবেদিন কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অফ আর্ট-এর শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দুর্ভিক্ষের স্কেচগুলিতে ভয়াবহতা উন্মোচন করার কাজে এগিয়ে যান।
জয়নুল আবেদিন ও ভাষা আন্দোলন
জয়নুল আবেদিন পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। আবেদিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত থেকে লড়াই করেছিলেন। পাকিস্তান সরকার দ্বারা প্রান্তিক বাঙালি পরিচয় পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালে, আবেদিন চীনা কালি, জলরঙ এবং মোম ব্যবহার করে ‘নবান্ন ‘ নামক একটি স্ক্রোল এঁকেছিলেন। তৎকালীন চলমান অসহযোগ আন্দোলনকে চিত্রিত করা হয়েছিল সেই স্ক্রোলে।
জয়নুল আবেদিনের রচনা ও চিত্রকর্ম, Zainul Abedin’s paintings
কাঠকয়লা জ্বালিয়ে জয়নুল নিজেই নিজের কালি তৈরি করেন এবং সস্তা, সাধারণ প্যাকিং কাগজ ব্যবহার করেন। দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্রের মধ্য দিয়ে জয়নুল রাস্তার পাশে মারা যাওয়া হতদরিদ্র মানুষের অসহায়ত্ব ও বঞ্চনা এবং অনাহারী লোকদের চিত্রিত করেছিলেন। উক্ত স্কেচগুলি তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ। তিনি দুর্ভিক্ষের ভয়ঙ্কর চেহারা প্রকাশ করেছিলেন অনাহারে মারা যাওয়া মানুষের কঙ্কালের চিত্রের মাধ্যমে। জয়নুল আবেদিন ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে সৃষ্ট এই দুর্ভিক্ষ চিত্রমালার মাধ্যমে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন। এ ছাড়াও তাঁর বিখ্যাত শিল্পকর্মগুলো হল: ১৯৫৭ সালের নৌকা, ১৯৫৯ সালের সংগ্রাম, ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধা, ম্যাডোনা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাঁর দীর্ঘ দুটি স্ক্রল ১৯৬৯ সালে অঙ্কিত ‘নবান্ন’ এবং ১৯৭৪ সালে অঙ্কিত ‘মনপুরা-৭০’ জননন্দিত দুই শিল্পকর্ম। চিত্রাঙ্কনের চেয়ে চিত্রশিক্ষা প্রসারের ওপর বেশি সময় ব্যয় করেছেন তিনি। তাঁর চিত্রকর্মের সংখ্যা আনুমানিক তিন হাজারের বেশি।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবনী ~ Biography of Satyendra Nath Bose in Bengali
সংগৃহীত
বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরে তাঁর শিল্পকর্মের ৮০৭ টি নিদর্শন সংগৃহীত। বেঙ্গল ফাউন্ডেশানের কাছে আরও প্রায় পাঁচশত চিত্রকর্ম সংরক্ষিত রয়েছে। তাঁর পরিবারের কাছে এখনও প্রায় চার শতাধিক চিত্রকর্ম সংরক্ষিত রয়েছে। ময়মনসিংহের সংগ্রহশালায় রক্ষিত তাঁর চিত্রকর্মের সংখ্যা ৬২। এসব ছাড়াও পাকিস্তানের বিভিন্ন সংগ্রহশালাগুলোতে জয়নুল আবেদিনের বিপুল পরিমাণ চিত্রকর্ম সংরক্ষিত করা হয়েছে।
সবার প্রিয় – সুচিত্রা সেন | Biography of Suchitra Sen in Bengali
সম্মাননা ও পুরস্কার, Awards and recognition
জয়নুল আবেদিন বাংলাদেশের চিত্রকরদের মধ্যে শিল্পগুরু বলে বিবেচিত। তাঁর নামে চারুকলা অনুষদে একটি গ্যালারি রয়েছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ৩৫ সংখ্যক গ্যালারীটিকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন চিত্রশালা হিসাবে সজ্জিত করা হয়।
২০০৯ সালের ৯ জুলাই, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন কর্তৃক বুধ গ্রহের একটি জ্বালামুখের নাম জয়নুলের মানবসভ্যতায় মানবিক মূল্যবোধ ও উপলদ্ধিকে গভীরতর করার উদ্দেশ্যে ‘আবেদিন জ্বালামুখ ‘নামকরণ করা হয়। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালায় শিশুদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজনও করা হয়। বিশ্বের প্রাচীনতম ও সর্ববৃহৎ ব্রিটিশ নিলামকারী প্রতিষ্ঠান বনহামসে তাঁর স্কেচ বিক্রয় করা হয়েছিল। জয়নুল আবেদিন ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের হেলাল-ই-ইমতিয়াজ নামক সবচেয়ে বড় খেতাব, ১৯৬৮ সালে ঢাকা আর্ট কলেজে পড়ুয়া ছাত্রদের থেকে ‘শিল্পার্চায’ উপাধি এবং ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক – এর সম্মান প্রদান করে।
চিত্রাঙ্কন এ জয়নুলের উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে ‘প্রাইড অফ পারফরম্যান্স’ পুরস্কার প্রদান করে। বাংলাদেশ সরকার দ্বারা পেয়েছিলেন স্বাধীনতা পুরস্কার।
জীবনাবসান, Zainul Abedin’s death
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জীবনাবসান ঘটে ১৯৭৬ সালের ২৮ মে। বাংলাদেশের চারুকলা ইনস্টিটিউটে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছিল তাঁকে।
উপসংহার, To conclude
বাংলার দুর্ভিক্ষ নিয়ে তৈরি চিত্রকর্মগুলিকে জয়নুল আবেদিনের সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কাজ হিসাবে ধরা হয়, ১৯৪৩ সালে সৃষ্ট সেই কাজগুলো জনমহলে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিল। তাঁর শৈল্পিক এবং দূরদর্শী গুণাবলীর ভিত্তিতে তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশ তাঁকে “শিল্পাচার্য”, “শিল্পের মহান শিক্ষক” উপাধি দ্বারা সম্মানিত করেছিল। জয়নুল মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের উপর ধারাবাহিকভাবে স্কেচ তৈরি করেছিলেন, তাই তাঁকে মানবতাবাদী শিল্পী বলা হয়ে থাকে ।
- ওপেনহেইমার এর জীবনী ও বিখ্যাত উক্তি সমূহ, Best Biography and quotes of Robert J Oppenheimer in Bengali
- ওয়াল্ট ডিজনির জীবনী, The Best Biography of Walt Disney in Bengali
- আবদুর রহমান, এক কিংবদন্তি অভিনেতা, The best biography of Abdur Rahman in Bengali
- মৃণাল সেনের জীবনী, Best Biography of Mrinal Sen in Bengali
- টমাস আলভা এডিসন এর জীবনী, Best Biography of Thomas Alva Edison in Bengali
Frequently asked questions
জয়নুল আবেদিন কবে জন্মগ্রহণ করেন?
১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে ডিসেম্বর।
জয়নুল কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহুকুমার কেন্দুয়া গ্রামে ।
জয়নুল আবেদিন কিভাবে বিখ্যাত হলেন?
দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্রের মধ্য দিয়ে জয়নুল রাস্তার পাশে মারা যাওয়া হতদরিদ্র মানুষের অসহায়ত্ব ও বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরেছেন। উক্ত স্কেচগুলি তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ। এ কাজের মাধ্যমে জয়নুল আবেদিন বিশ্বে খ্যাতি লাভ করেন।
জয়নুলের বিখ্যাত স্কেচগুলির থিমগুলি কী ছিল?
তাঁর বিখ্যাত স্কেচগুলির বিষয়বস্তু ছিল ‘বাঙালি’ শৈলী’ ‘দুর্ভিক্ষের স্কেচ’ ‘মনপুরা’।
জয়নুলের জীবনাবসান কবে ঘটে?
১৯৭৬ সালের ২৮ মে।