ভূমিকা, Introduction
ইন্টারনেট সম্পর্কে আমাদের মধ্যে প্রায় সকলেই অবগত। বিজ্ঞানের যেসকল আবিষ্কার মানব জাতিকে সভ্যতার স্বর্ণশিখরে আরোহণ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে এর মধ্যে অন্যতম হল ইন্টারনেট।
আজকের বিশ্বে বহুলভাবে আলোচিত গতিময়তার মাইল ফলক হচ্ছে ইন্টারনেট। বর্তমান পৃথিবীর তথ্যপ্রযুক্তির সকল কর্মকান্ডকে ইন্টারনেট এমন একটি সুতোর বাঁধনে আবদ্ধ করে নিয়েছে যে, সেই সুতো ছিঁড়ে গেলে সমগ্র বিশ্বব্যবস্থাই হয়তো তৎক্ষণাৎ অচল হয়ে পড়বে। আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা আধুনিক শিক্ষায় ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
শিক্ষায় ইন্টারনেট এর সুবিধাগুলি, Advantages of Internet in Education
১. সার্চ ইঞ্জিন এর ব্যাবহার
সময়ের সাথে সাথে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েই চলেছে, আর সেই সঙ্গে বাড়ছে সার্চ ইঞ্জিন এর ব্যাবহারও। ইয়াহু, গুগল, বিং এই সকল সার্চ ইঞ্জিনগুলি এখন যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। সারা বিশ্বজুড়ে প্রতি সেকেন্ড এ গুগল এ প্রায় ৪০০০০ বার কিছু না কিছু সার্চ করা হয়।
বর্তমান সময়ে পৃথিবীর হয়তো এমন কেউ নেই যারা ইন্টারনেট ব্যাবহার করেন না। তাই আগামী কিছু বছরের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিন এর ব্যবহার অনস্বীকার্য হয়ে উঠলে সেটা আর আশ্চর্যের কিছু হবে না। শিক্ষাক্ষেত্র হোক বা দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো মুহূর্ত, আমরা যখনই কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হয় কিংবা কোনো বিষয়ে জানার প্রয়োজন হয়, তখন আমরা সাথে সাথেই গুগোল বা ইয়াহু ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিনের ব্যবহার করে মিনিটের মধ্যে উত্তর পেয়ে যাই।
বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে আমরা সার্চ ইঞ্জিনের দ্বারস্থ হই, এখন তা কোনো ক্লাসের অ্যাসাইনমেন্টই হোক বা অনলাইনের কোনো সাইন্স প্রজেক্ট সম্পর্কেই হোক গুগল ব্রাউজার, ইয়াহু ,বিং এই সব সার্চ ইঞ্জিনগুলোর সহায়তায় আমরা তৎক্ষণাৎ কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তরগুলো পেয়ে যেতে পারি।
২. অতিমারী Covid -১৯ এর সময় শিক্ষায় ইন্টারনেটের প্রভাব
অতিমারী Covid -১৯ এর দাপট চলাকালীন ইন্টারনেটের গুরুত্ব অল্প সময়ের মধ্যেই বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল। তখন Covid -১৯ এর প্রভাবে সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ছাত্র-ছাত্রী তাদের প্রথাগত ক্লাসরুম থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে এবং সেই সুযোগেই ইন্টারনেট শিক্ষাক্ষেত্রের একমাত্র সহায়ক হয়ে উঠে।
এই সময়ে বিভিন্ন ভাষায় ভার্চুয়াল শিক্ষকতা তথা ভিডিও কনফারেন্সিং থেকে শুরু করে অনলাইন লার্নিং এর বিভিন্ন সফটওয়্যারটও ব্যাপক ভাবে প্রসারিত হয়েছিল। এর উদহারণ হিসেবে বিভিন্ন অনলাইন শিক্ষার অ্যাপগুলোর কথা বলা যায়, বর্তমান সময়ে এই সকল অ্যাপ এর সহায়তায় অনলাইন শিক্ষায় ইন্টারনেটের গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে উঠেছে।
৩. ইন্টারনেট এর সহযোগিতায় শিক্ষাব্যাবস্থায় কম খরচ
অতিমারী Covid -১৯ এর প্রভাব একদিকে যেমন বহু মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল ঠিক তেমনই বহু মানুষ জীবিকা হারিয়েছিলেন। তাই এই অবস্থাতে প্রথাগত শিক্ষার প্রয়োজনীয় খরচেও টান পড়েছিল।
তখন একদিকে সংক্রমণ আর অন্যদিকে কম খরচ এর কারণে ইন্টারনেট শিক্ষাব্যবস্থা দারুনভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এবং এই জনপ্রিয়তা আর কমে যায় নি, বরং দিন দিন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন বিষয় সংক্রান্ত ইউটিউব ভিডিও টিউটোরিয়াল, পিডিএফ ফাইল, ডকুমেন্ট, পাওয়ারপয়েন্ট প্রেসেন্টেশন ইত্যাদি সমস্ত কিছুর উপস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় বিনা বাধায় শিক্ষার মান অনেকটাই বেড়ে ওঠেছে।
৪. ঘরে বসে বসেই বিশ্বমানের শিক্ষাব্যাবস্থা প্রাপ্তি
দূরত্বের বিষয়টা আজ অনলাইন শিক্ষাতে আর কোনো বাধা হিসেবে থাকছে না, এখন আপনি নিজ দেশে বসে থেকে দেখে নিতে পারবেন অক্সফোর্ড এর যেকোনো রিসার্চ পেপার। প্রয়োজন হিসেবে সরাসরি পেপারটির লেখকের সাথে ইমেইল এর মাধ্যমে যোগাযোগও করতে পারবেন, আর এই সবকিছুই আজ সম্ভব হয়েছে শিক্ষায় ইন্টারনেটের প্রসার ঘটার জন্য।
বর্তমান অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীরা শুধুমাত্র একজন শিক্ষকের উপরই যে নির্ভর করে আছে তা না, বরং সারা বিশ্বের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এবং নিজেদের জ্ঞানকে আরো বেশি প্রসারিত করতে পারছে, তাও আবার ঘরে বসে থেকে শুধু মাত্র একটি ক্লিকের মাধ্যমেই।
এইরূপ ব্যবস্থা ইন্টারনেট এর ব্যবহার ছাড়া হয়তো আর কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না। অতীতে শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে শুধু প্রাচ্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার জন্য হুয়েন স্যাং থেকে শুরু করে ইবন বতুতা পর্যন্ত অনেকেই হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এসেছিলেন। তবে ইন্টারনেট এর যুগে দাঁড়িয়ে সেটা আজ মাত্র একটি ক্লিক এই সম্ভব হয়ে উঠেছে।
ছবি সাজানোর সফটওয়্যার ডাউনলোড করার নিয়ম, Know how to download photo editing software in Bengali
৫. ওয়ান টু ওয়ান সেশনের গুরুত্ব
অনলাইন শিক্ষায় খরচ কমিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়ান টু ওয়ান সেশন এবং ইন্টারেক্টিভ সেশনের সুবিধাও এনে দিয়েছে যার দৌলতে শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রী উভয়েই উপকৃত হচ্ছেন।
বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, বার্তা পাঠানোর অ্যাপ এবং হোয়াটস্যাপ গ্রুপ ইত্যাদির সহায়তায় ছাত্র এবং শিক্ষক পরস্পরেই একে অপরের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মতামত আদান প্রদান করতে পারেন। তাছাড়াও বেশ কিছু ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম যেমন Zoom ,ফেসবুক লাইভ বা হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিওর দ্বারা যোগাযোগ মাধ্যম সৃষ্টি ইত্যাদির মাধ্যমে অতি সহজেই পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভালো মানের শিক্ষা পেয়ে যেতে পারেন।
৬. যেকোনো বিষয়ের সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ
ইন্টারনেটের সাহায্যে পড়াশুনা এখন শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে আর আবদ্ধ নেই, পৃথিবীর নানা ধরনের তথ্য আজকাল খুব সহজেই আমরা মাত্র একটি ক্লিকের মাধ্যমেই পেয়ে যাচ্ছি হাতের মুঠোয়।
তাই আমরা নিজেরাই আপডেটেড থেকে সেই সকল তথ্যগুলি আমরা আমাদের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় শিক্ষার জন্য কাজে লাগাচ্ছি। তাছাড়া বিভিন্ন রিসার্চ পেপার বা জার্নাল পরে বিনা বাধায় ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে।
৭. যখন খুশি তখন পড়াশুনা করা যায়
অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার বিশেষ এক সুবিধা হল আপনি নিজের সুবিধা অনুসারে যে কোনো সময় বা বলতে গেলে যখন খুশি নিজের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ বা পড়াশোনাগুলো করে নিতে পারেন। আবার জরুরী বিষয়গুলো রেকর্ড করেও রাখতে পারেন, তাছাড়া ওয়েবিনার, ভিডিও তথা স্লাইড শেয়ারগুলো প্রয়োজনের সময় দেখে নিতে পারেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের কিছু নেতিবাচক দিক, Some negative aspects of using internet in education
আজকের যুগে আমরা সকলেই ইন্টারনেটের উপর যেভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি, এর থেকে হয়তো পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া বেশ কঠিন হবে। কিন্তু কোনোও কারণে যদি ইন্টারনেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন অনেক সমস্যায় পড়ে যেতে হতে পারে। তাই আমাদেরকে ইন্টারনেটের উপর এতটাও নির্ভর করা ঠিক নয়।
১. স্ব-শৃঙ্খলার অভাব
অনলাইন শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ভূমিকা নিঃসন্দেহে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তবুও এই ব্যাবস্থাটির মধ্যে আছে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা। খাতা কলমে ব্যবহার না করে বা পুস্তকের মাধ্যমে পড়াশুনা না করে বরং পিডিএফ ডাউনলোড এবং ভিডিও টিউটোরিয়াল ডাউনলোড করার মধ্য দিয়েই অনলাইনে শিক্ষা গৃহীত হয়।
তাই এই শিক্ষাব্যবস্থাকে অনেকে হালকা ভাবে নেয়, সে ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় যে এই পিডিএফ এর বিষয়বস্তু এবং ভিডিও টিউটোরিয়ালগুলো শুধু ডাউনলোড হয়েই থেকে যায়, এসব থেকে অনেকেই প্রকৃত শিক্ষা নিতে পারেন না। তবে এটি ইন্টারনেটের কোনো দোষ না, বরং যারা অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছন্দ নয় তাদের দোষ।
এক্ষেত্রে শিক্ষার সঙ্গে প্রকৃত যোগাযোগ না থাকার ফলে বা ক্লাসরুম এ গিয়ে পড়াশুনা না করার ফলে অনেকে একে সময় কাটাবার একটি মাধ্যম হিসাবে ধরে নেন, আর শুধু চ্যাটিং এবং বিনোদনের জন্য ব্যাবহার করতে শুরু করেন।
গুগল ড্রাইভ কি এবং কিভাবে তা ব্যবহার করতে হয়? Know what is Google Drive and its usage in Bengali
২. ইন্টারনেট ব্যবহারের কিছু অসুবিধা
অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট কানেকশন ভালো যদি না থাকে তবে এই অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থাটি কার্যকরী হতে পারবেনা। তাই এরূপ শিক্ষা দানের তথা শিক্ষা প্রাপ্তির জন্য ইন্টারনেট , কম্পিউটার, পিসি এবং মোবাইল ব্যবহার করা জানতে হবে, অন্তত এসব ব্যবহারের প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হবে। ইন্টারনেটের বিস্তার পূর্বের তুলনায় অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে তবুও ভারতের এমন কিছু প্রত্যন্ত গ্রাম আছে যেখানে এখনো ইন্টারনেটের দৌড় তেমন ভাবে শুরু হয়নি, তাই এই সমস্ত জায়গায় অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা দিতে পারে।
- কিভাবে হোয়াটস্যাপ এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক সক্রিয় করবেন | Bengali Guide to set Fingerprint Lock in Whatsapp
- হোয়াটস্যাপ এ টেক্সট ফরম্যাট করার সহজ উপায় | How to format text in Whatsapp in Bengali
- ফোনের লক বাটন খারাপ হয়ে গেছে ? জেনে নিন সহজ উপায়ে হার্ডওয়্যার লক বাটন ছাড়াও ম্যানেজ করা
- ইউটিউব ভিডিও ও অডিও ডাউনলোড করার ৭টি সহজ উপায়
- মোবাইল থেকে কাটুন লোকাল ট্রেন এর টিকিট, প্ল্যাটফর্ম টিকেট, জানুন UTS অ্যাপ এর ব্যবহার
উপসংহার, Conclusion
দিনের পর দিন ইন্টারনেটের উপর আমাদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে, শুধু পড়াশুনা নয় বরং আরো অনেক কিছুর জন্যই আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করি। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে যেন আরো সহজ করে তুলেছে।
বেশিরভাগ মানুষই এর ব্যবহারের উপর নির্ভর করে বহু জিনিস আয়ত্ব করে নিতে পারছি। তাই বলা যায় যে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীম।