কম্পিউটারের ব্যবহার জানেন না এমন ব্যক্তি আজকের দিনে পাওয়া দুঃসাধ্য, তাছাড়া এই যন্ত্রটি ব্যবহার হয়না এমন কোনো অফিস বা স্কুল হয়তো কোথাও নেই। আধুনিক যুগের দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য এই কম্পিউটার সিস্টেম প্রধানত দুইটি ভাগে বিভক্ত, সেগুলো হল: হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার। হার্ডওয়্যার বলতে কম্পিউটার সিস্টেমের গাঠনিক এবং দৃশ্যমান সকল যন্ত্রাংশগুলোকে বোঝায়, যেমন: কীবোর্ড, মনিটর, CPU, এবং মাউস ইত্যাদি।
অন্যদিকে, সফটওয়্যার হল নির্দেশাবলীর একটি সেট যা হার্ডওয়্যারগুলোকে তাদের নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে সাহায্য করে। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার এর কাজ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত, আবার এই দুটি অংশ ছাড়া কম্পিউটারে কোনো কাজ করা সম্ভব হয়না। এই প্রতিবেদনে আমরা কম্পিউটারে এই গুরত্বপূর্ণ অঙ্গ দুটির সম্পর্কে আলোচনা করবো।
হার্ডওয়্যার কি? What is meant by Hardware?
হার্ডওয়্যার হল কম্পিউটারের একটি ভৌত অংশ যা সাধারণভাবে স্পর্শযোগ্য হয় এবং এটি ডেটা প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনে এই হার্ডওয়্যারগুলো পরিবর্তনও করা যায়। একটা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার বলতে সেসব অংশকে বোঝায় যাদের নিজস্ব শারীরিক গঠন বা কাঠামো রয়েছে এবং সেই অংশগুলোকে দেখা যায় এবং স্পর্শ করা যায়।
আমাদের মধ্যে অনেকেরই জানা বিষয় এটা যে বিভিন্ন হার্ডওয়্যার এর দ্বারাই একটা কম্পিউটার এর শারীরিক কাঠামো গঠিত হয়। যেমনঃ হার্ডডিস্ক, মাউস,কেসিং, র্যাম, মনিটর, ডিভিডি-রোম, মাদারবোর্ড এইসব কিছুই হার্ডওয়ারের অন্তর্ভুক্ত।
শিক্ষামূলক উক্তি সমূহ, Educational quotes in Bengali language
হার্ডওয়্যার কত প্রকারের হয়? Types of Hardware
কমপিউটারে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রাংশ হার্ডওয়্যার হিসেবে পরিচিত। তবে তাদের কাজ অনুযায়ী এগুলোকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সাধারণত যে কোনো কম্পিউটারে দুই ধরনের হার্ডওয়্যারের ব্যবহার করতে দেখা যায়, এগুলো হল-
ইনপুট হার্ডওয়্যার : Input Hardware
ইনপুট হার্ডওয়্যার সেই সব হার্ডওয়্যার কে বলা হয় যেগুলোর মাধ্যমে কম্পিউটার ব্যবহারকারী কোন একটি ডাটা ইনপুট করেন অথবা কোন একটা তথ্য প্রক্রিয়াকরণের সিগনালকেই নিয়ন্ত্রণ করে এবং শেষ পর্যন্ত কোন একটি আউট পুট পান। কী-বোর্ড, ক্যামেরা, মাউস, ওয়েবক্যাম, স্ক্যানার, টাচস্ক্রীন, জয়স্টিক, মাইক্রোফোন; এগুলো হল একটি কম্পিউটারে ব্যবহৃত ইনপুট হার্ডওয়্যার।
আউটপুট হার্ডওয়্যারঃ Output Hardware
ইনপুট হার্ডওয়্যার গুলো কম্পিউটার সিস্টেম কে প্রসেসিং করার জন্য যে সব তথ্য পাঠায়, আউটপুট হার্ডওয়্যার সেই প্রসেসিং করা তথ্যগুলোকে পুনরুত্পাদন করে এবং আপনার সামনে তুলে ধরে। সুতরাং ইনপুট হার্ডওয়্যারগুলো যেখানে শুধুমাত্র কম্পিউটারে ডাটা ইনপুট করার কাজ করে সেখানে আউটপুট হার্ডওয়্যারগুলো সেই ডাটার আউটপুট রেজাল্ট গ্রহণ করে সেই রেজাল্টটাই কম্পিউটারের ডিসপ্লেতে তুলে ধরে। মনিটর, অডিও স্পীকার, সাউন্ড-কার্ড, হেডফোন, জিপিএস, প্রজেক্টর, প্রিন্টার, ভিডিও-কার্ড ইত্যাদি হলো কম্পিউটারের আউটপুট হার্ডওয়্যার।
হার্ডওয়্যার এর গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নিন, Importance of Hardware in Bangla
কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারগুলো আমাদের শরীরে থাকা বিভিন্ন কার্যকরী অংশগুলোর মতন। কোন একটি অংশ না থাকার কারণে কাজে অসম্পূর্ণতা অথবা কাজ না করতে পারার মত সমস্যা দেখা দেয়। কোনো একটা কম্পিউটারের মধ্যে যদি কী-বোর্ড, হার্ডডিস্ক, মাদারবোর্ড, পাওয়ার সাপ্লাই, ইত্যাদি জিনিসগুলো না থাকে তবে সেই কম্পিউটার কাজ করতে একেবারেই অক্ষম হয়ে থাকবে। সুতরাং বলাই বাহুল্য যে হার্ডওয়্যার ছাড়া কম্পিউটারের কর্মক্ষমতা থাকেনা।
হার্ডওয়্যার সাহায্যে কম্পিউটারের কাজ অনেকটা সহজে করা সম্ভব হয়েছে, ফলে শ্রম ও অর্থের অপচয় হ্রাস পেয়েছে। আমরা অনেকেই দেখেছি যে অফিস আদালতে থাকা কম্পিউটারের কোনো যন্ত্রাংশ বা হার্ডওয়্যারে কোনো সমস্যা দেখা দিলে অনেক কাজ আটকে থাকে, এতেই বোঝা যাচ্ছে যে এই যন্ত্রাংশ কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
IMPS এবং NEFT সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, Detailed information about IMPS and NEFT in Bengali
সফটওয়্যার কি? What is meant by Software?
অতি সাধারণভাবে বলতে গেলে সফটওয়্যার হচ্ছে নির্দেশাবলীর একটি সেট যা বিভিন্ন হার্ডওয়্যারকে একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে সাহায্য করে থাকে। সফটওয়্যার এর উদাহরণ হিসেবে আছে ইনপুট ডিভাইস, আউটপুট ডিভাইস, প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট এবং স্টোরেজ ডিভাইস। এই সফটওয়্যার বলতে কোনো কম্পিউটারের সকল রকম প্রোগ্রামিং- এর সমন্বয় এবং এদের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ব্যবহার নির্দেশ কারক কে বোঝায়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে এই সব প্রোগ্রামের মাধ্যমে কম্পিউটার কে কখন কোন কাজ কীভাবে সম্পন্ন করতে হবে তার নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিউই ফল কি, কিউই ফলের উপকারিতা, kiwifruit benefits in Bengali
সফটওয়্যার কত প্রকারের হয়, Different types of Software
কম্পিউটার ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে এই সফটওয়্যারের ব্যবহারের চাহিদাই দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রোগ্রাম রয়েছে এবং দিন দিন সেগুলো আরো উন্নত করে তোলা হচ্ছে। বলাই বাহুল্য যে ব্যবহারকারীদের চাহিদা এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সফটওয়্যার তৈরী করা হয় এবং সময়ের সাথে সাথে তার উন্নয়নও করা হয়।
এই সফটওয়্যার মূলত তিন ধরনের হয়। সেগুলি হল: সিস্টেম সফটওয়্যার, প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার ও এপ্লিকেশন সফটওয়্যার। এর মধ্যে সিস্টেম সফটওয়্যার এর আরো প্রকারভেদ রয়েছে, কথা- অপারেটিং সিস্টেম, ইউটিলিটি এবং মিডল ওয়্যার।
সিস্টেম সফটওয়্যার : System Software
সিস্টেম সফটওয়্যার নাম টা দেখেই মনে হচ্ছে এর কাজ কম্পিউটারের সিস্টেম এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। এর কাজ মূলত বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের কাজ সমন্বয়ে করানো এবং সহজে বিনা বাধায় কাজ সম্পন্ন হওয়ার জন্য কার্যকরী একটা পরিবেশ এর সৃষ্টি করা। এক কথায় এটা বলা যায় যে, উক্ত সিস্টেম সফটওয়্যারগুলো ছাড়া একটা কম্পিউটার অচল, কারণ এই সফটওয়্যারের উপর হার্ডওয়্যারের কার্যকারিতা নির্ভর করে তথা কম্পিউটার সঠিক ভাবে কাজ করে।
এপ্লিকেশন সফটওয়্যার: Application Software
এপ্লিকেশন সফটওয়্যারগুলো কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বিশেষ কোন কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। এপ্লিকেশন সফটওয়্যার এর উদাহরণ হল: গ্রাফিক্স সফটওয়্যার, অফিস সফটওয়্যার, মিডিয়া সফটওয়্যার ইত্যাদি।
প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার: Programming Software
প্রোগ্রামিং সফটওয়্যারগুলো হল কম্পিউটারের প্রায় প্রতিটি প্রোগ্রামার অথবা সফটওয়্যার উন্নয়নকারীদের ব্যবহৃত সেই সকল সফটওয়্যার যেগুলো দিয়ে প্রত্যেক সিস্টেম সফটওয়্যার এবং এপ্লিকেশন সফটওয়্যার গুলো তৈরী করা, তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কাজ হয়। অন্যান্য সকল রকম প্রোগ্রাম বা সিস্টেমের সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে এই সব সফটওয়্যার তৈরী করা হয়।
সফটওয়্যার এর গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নিন, Importance of software
যেকোনো সফটওয়্যার এর আসল কাজ হলো কোন একটি ইনপুট কে আউটপুট এ পরিবর্তন করে দেওয়া। একটা সফটওয়্যার সেইসব কাজই করে যেটা ব্যবহারকারী তাকে করার জন্য নির্দেশ দিয়ে থাকে। আপনার কম্পিউটারে যদি কোন অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার না থাকে তবে আপনি কম্পিউটার একদম চালাতেই পারবেন না। এক কথায়, সফটওয়্যার ছাড়া প্রতিটি কম্পিউটারই অচল হয়, কারণ সফটওয়্যার এর দ্বারাই হার্ডওয়্যার এর কাজের সমন্বয় ঘটে এবং আমাদের কম্পিউটার বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়।
হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর মধ্যে পার্থক্য, Difference between hardware and software
● যে সব ভৌত ডিভাইস বা যন্ত্রাংশ দিয়ে একটি কম্পিউটার তৈরি হয়, সেগুলোকে হার্ডওয়ার বলে। অপরদিকে, সফটওয়্যার হল নির্দেশনা দেওয়ার সেট যা কম্পিউটারকে কি কাজ করতে হবে তার নির্দেশনা দেয়।
● হার্ডওয়ারকে আমরা সাধারণভাবে স্পর্শ করতে পারি, কিন্তু সফটওয়্যারকে স্পর্শ করা যায় না।
● হার্ডওয়ার হলো একটি কম্পিউটারের দেহের বিভিন্ন অংশ, কিন্তু সফটওয়্যারগুলো হলো কম্পিউটারের প্রাণ।
● কী-বোর্ড, মাউস, মনিটর, প্রিন্টার ইত্যাদি হল কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এর উদাহরণ। অপরদিকে, উইন্ডোজ 2007, 2008 ইত্যাদি হল সফটওয়্যার এর উদাহরণ।
উপসংহার, To conclude
বর্তমান যুগে কম্পিউটার সিস্টেম প্রায় সকল প্রকার দপ্তর বা স্কুল কলেজের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এই যন্ত্রের ব্যবহারে আজকের দিনে কঠিন কিছু কাজ যা পূর্বে বেশ সময় সাপেক্ষ ছিল, তা অনেকটাই সহজ হয়ে উঠেছে, কম্পিউটার দিয়ে অনেক কম সময়ে কঠিন হিসাব করে নেওয়া যায়, অন্যদিকে বহু জরুরী তথ্য বছরের পর বছর ধরে সংগ্রহ করে রাখা যায়। উক্ত সকল কাজ করার ক্ষেত্রে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর ভূমিকা রয়েছে, কারণ এগুলো ছাড়া কম্পিউটারের দ্বারা কোনো কাজই সম্ভব নয়। দিনের পর দিন প্রযুক্তির যত বিকাশ ঘটছে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর মান ততই উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে।
- কিভাবে হোয়াটস্যাপ এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক সক্রিয় করবেন | Bengali Guide to set Fingerprint Lock in Whatsapp
- হোয়াটস্যাপ এ টেক্সট ফরম্যাট করার সহজ উপায় | How to format text in Whatsapp in Bengali
- ফোনের লক বাটন খারাপ হয়ে গেছে ? জেনে নিন সহজ উপায়ে হার্ডওয়্যার লক বাটন ছাড়াও ম্যানেজ করা
- ইউটিউব ভিডিও ও অডিও ডাউনলোড করার ৭টি সহজ উপায়
- মোবাইল থেকে কাটুন লোকাল ট্রেন এর টিকিট, প্ল্যাটফর্ম টিকেট, জানুন UTS অ্যাপ এর ব্যবহার
Frequently asked questions
হার্ডওয়্যার হল কম্পিউটারের একটি ভৌত অংশ যা সাধারণভাবে স্পর্শযোগ্য হয় এবং এটি ডেটা প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনে এই হার্ডওয়্যারগুলো পরিবর্তনও করা যায়।
বিভিন্ন হার্ডওয়্যার এর দ্বারাই একটা কম্পিউটার এর শারীরিক কাঠামো গঠিত হয়। যেমনঃ হার্ডডিস্ক, মাউস,কেসিং, র্যাম, মনিটর।
সফটওয়্যার হচ্ছে নির্দেশাবলীর একটি সেট যা বিভিন্ন হার্ডওয়্যারকে একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে সাহায্য করে থাকে।
উইন্ডোজ 2007, 2008 ইত্যাদি।